স্ট্রবেরির বীজ কি ফলের বাইরে থাকে

কদিন বাদেই স্ট্রবেরির মৌসুম। সুপারশপের দামি বক্সের মধ্যে যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি ফুটপাতের ফেরীওয়ালা লবণ-ঝাল দিয়ে মাখিয়ে বিক্রি করবে স্ট্রবেরী ভর্তা! সাধারণ ফলের দোকানেও পাওয়া যায় অহরহ। গত কয়েকবছর ধরে শীত মৌসুমে ফলটি আমাদের দেশে বেশ পাওয়া যাচ্ছে, বিশেষ করে শহুরে অঞ্চলে। অনেকেই খুব শখ করে খান এ ফল।

লাল টুকটুকে ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি অদ্ভুত। বার্গারের রুটির ওপরে যেমন তিল ছিটানো হয়, তেমনি তিলের মতো দেখতেই ছোট ছোট কণা ছিটানো স্ট্রবেরির গায়ে। প্রথম দর্শনে যা-ই মনে হোক না কেন,  ফল বিষয়ে ধারণা রাখেন এমন কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলবে, ওগুলো স্ট্রবেরির বীজ।

আপনার হয়তো একটু খটকা লাগবে শুনে। আম, কাঁঠাল, তরমুজ—সব ফলের বীজ থাকে ভেতরে। তাহলে এ ফলের বীজ বাইরে থাকে কেন? এমন প্রশ্ন মাথায় এলে আপনাকে দোষ দেওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি অ্যান্ড প্ল্যান্ট প্যাথোলজি বিভগের অধ্যাপক অ্যারোন লিসটনের মতে, এই প্রশ্নটা বেশ মজার। কারণ, স্ট্রবেরির গায়ে আমরা যে দানা দেখি, সেগুলো ঠিক বীজ নয় বরং ফল। হলুদ কিংবা বাদামি রঙের ডিম্বাকৃতির এই দানাগুলোকে বলা হয় অ্যাকিন। প্রায় সব ফলের মতো প্রতিটি অ্যাকিনের ভেতর বীজ লুকিয়ে থাকে।

গড়পড়তা মাঝারি আকারের স্ট্রবেরিতে প্রায় ২০০টির মতো অ্যাকিন থাকে। অর্থাৎ যখন আমরা একটা স্ট্রবেরি খাই, তখন আসলে একটা ফল নয়, প্রায় ২০০ ফল একসঙ্গে খেয়ে ফেলি!

এতক্ষণে মাথায় হয়তো আরেকটা প্রশ্ন ঘুরঘুর শুরু করেছে। অ্যাকিন যদি ফল হয়, তাহলে পুরো স্ট্রবেরিটা কী? পুরো স্ট্রবেরিটাকে একটু জটিল জিনিস। এটা ঠিক বেরি জাতীয় ফল না। এর বড় রসালো অংশটাকে ফল বলতেও নারাজ অনেকে। শুধুই স্ফিত একটি ফলধারক পাত্র বলা যায়।

ফুলের মধ্যে রসালো এ পাত্রটি মূলত সবগুলো অংশ ধরে রাখে। অনেকটা ফলের ভিত্তির (গর্ভাশয় ও পরাগরেণু ইত্যাদি ধরে রাখে এই ভিত্তি) মতো। অধ্যাপক লিস্টন বলেন, ‘স্ট্রবেরিতে এ ফলধারক পাত্রটি ধীরে ধীরে বড় এবং শাঁসালো হয়ে ওঠে। খেতেও হয় মজার! এ দিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফলধারক অংশটি বেড়ে উঠলেও আসল যে ফল (অ্যাকিন), তা একই আকারে থেকে যায়। এটা যদি স্ট্রবেরির সবুজ অবস্থা এবং পাকা অবস্থায় ছোট ছোট ফল পাশাপাশি নিয়ে দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন’।

স্ট্রবেরির অ্যানাটমি

সাধারণত একটি গাছের জিন তাকে বলে দেয়, ফল কেমন আকৃতির হবে, কেমন মিষ্টি হবে। কিন্তু স্ট্রবেরির ক্ষেত্রে ঘটনাটা একটু ভিন্ন। জিনের যখন গাছকে ফলের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তখন স্ট্রবেরি গাছকে জিন নির্দেশনা পাঠায় ফল ধারক অংশের বিষয়ে। অর্থাৎ, যে জিনের কারণে যেকোনো গাছে ফল বড় হয় এবং রসালো হয়, সেটাই স্ট্রবেরিতে ফলধারক অংশের বৃদ্ধিতে কাজ করে। ফলে স্ট্রবেরি ধীরে ধীরে পাখি, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রাণী—সবার কাছের চমৎকার খাবার হয়ে ওঠে।

বীজকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা সব গাছ কিংবা ফলের মধ্যই দেখা যায়। এক্ষেত্রে স্ট্রবেরি একটু বেশিই সফল বলা যায়। রূপ ও রসে প্রাণীকে আকৃষ্ট করার এবং একই সঙ্গে বীজ নিরাপদে রাখার সব ব্যবস্থায় আছে স্ট্রবেরিতে। 

ফল বা অ্যাকিন যা-ই বলি না কেন, সেখানে শক্ত খোলসের মধ্যে নিরাপদে লুকানো থাকে বীজ। এগুলো ফলধারকের সঙ্গে খুব শক্তভাবে লেগেও থাকে না। ফলধারকের বয়স বেড়ে গেলে নিজে থেকেই খসে পড়ে মাটিতে। আর তার আগে প্রাণীর পেটে গেলে তো হলোই। পাকস্থলী পার হয়ে বিষ্ঠার সঙ্গে পড়বে মাটিতে, ছড়িয়ে পড়বে দূর দূরান্তে।

তাহলে বলা যায়, স্ট্রবেরির বীজ ফলের গায়ে লেগে থাকে না। বরং ফলের বাইরে বীজের মতো যা দেখা যায়, তা আসলে ফল। আর স্ট্রবেরির বীজ থাকে এই ছোট ছোট ফলের ভেতরে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, উইকিপিডিয়া