ডাইনোসর বাস্তবে কেমন ছিল

ডাইনোসর নিয়ে সাধারণ মানুষ যতটুকু জানে তার যতটা না বই পড়ে, তার চেয়ে অনেক বেশি জুরাসিক পার্ক ফ্র্যাঞ্চাইজ-এর সিনেমাগুলো দেখে। ১৯৯৩ সালে যখন স্টিফেন স্পিলবার্গের এই সিনেমা মুক্তি পায়, চারদিকে সাড়া পড়ে যায়। ডাইনোসরকে নিয়ে এর আগেও ছবি বানানো হয়েছে, কোনোটা অ্যানিমেশন ব্যবহার করে, কোনোটা ছিল লাইভ অ্যাকশন। কিন্তু জুরাসিক পার্ক-এর মতো এত বড় পরিসরে এর আগে কখনো ডাইনোসরকে নিয়ে ছবি বানানো হয়নি। এর ওপর সেই ছবি যদি বানান স্পিলবার্গের মতো কোনো বিখ্যাত পরিচালক, তাহলে তো কথাই নেই। কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি (সিজিআই) এবং অ্যানিমেট্রনিকস ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইটস অ্যান্ড ম্যাজিক (আইএলএম) রুপালি পর্দার জন্য তৈরি করেছিল বিশালাকার টিরানোসরাস রেক্স (টি.রেক্স) কিংবা ভয়ংকর ভেলোসির্যাপ্টর। এসব ডাইনোসরের যে চেহারা আমরা দেখেছি, প্যালিওনটোলজিস্ট, মানে জীবাশ্মবিজ্ঞানী, যাঁরা ডাইনোসর নিয়ে কাজ করেন তাঁদের কাছে কিন্তু ডাইনোসরগুলো মোটেও সে রকম ছিল না! টি.রেক্স কিংবা ভেলোসির্যাপ্টরের আকার, এদের গতি, দৃষ্টিশক্তি কিংবা চামড়ার গঠন—সবকিছুই আসলে কমবেশি ভিন্ন ছিল। জুরাসিক পার্ক সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্রটির অভাবনীয় সাফল্যের পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত এর আরও তিনটি সিকোয়েল মুক্তি পেয়েছে। এই সিনেমাগুলোতেও যে বিভিন্ন ডাইনোসরকে দেখানো হয়েছে, সেসব ডাইনোসরের শারীরিক গঠন থেকে শুরু করে এদের তৈরির প্রক্রিয়া—সবকিছুতেই আসলে কল্পনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

জুরাসিক পার্ক ছবিতে সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী ডাইনোসর হিসেবে অবশ্য দেখানো হয়েছে টি.রেক্সকে। টি.রেক্স কিন্তু সবচেয়ে বড় মাংসাশী ডাইনোসর ছিল না। সবচেয়ে বড় মাংসাশী ডাইনোসর ছিল স্পাইনোসরাস।

সিনেমার নাম জুরাসিক পার্ক দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে যে ছবির মূল আকর্ষণ টিরানোসরাস রেক্স জুরাসিক যুগে পৃথিবীতে বসবাস করত। বাস্তবে কিন্তু জুরাসিক যুগ শেষ হওয়ার আরও প্রায় ৭৭ মিলিয়ন বছর পরে পৃথিবীতে এদের রাজত্ব ছিল। তবে এদের বিবর্তন আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। ভূতাত্ত্বিক সময়কালের জুরাসিক যুগ ছিল ২০১ দশমিক ৩ থেকে ১৪৫ মিলিয়ন বছর আগ পর্যন্ত। জুরাসিক যুগ শেষ হওয়ার পর আসে ক্রিটেশাস যুগ। ক্রিটেশাস যুগের শেষের দিকে ১০০ দশমিক ৫ থেকে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে টি.রেক্সের বসবাস ছিল পৃথিবীতে। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া সিকোয়েল জুরাসিক পার্ক ৩-এর মূল আকর্ষণ ছিল যে স্পাইনোসরাস, কিন্তু সেটিও জুরাসিক যুগে পৃথিবীতে ছিল না। এরাও ক্রিটেশাস যুগে ১১২ থেকে ৯৩.৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত। দাপিয়ে বেড়াত বলার কারণ হচ্ছে আকারে এরা টি.রেক্স থেকে অনেক বড় ছিল।

জুরাসিক পার্ক ছবিতে আমরা খসখসে চামড়াযুক্ত ভেলোসির্যাপ্টরদের দেখেছি। আধুনিক ফসিল রেকর্ড থেকে বিজ্ঞানীরা প্রায় নিশ্চিতভাবে জেনেছেন, ভেলোসির্যাপ্টরদের পাখির মতো পালক ছিল। তবে তারা উড়তে পারত না। ১৯৯৮ সালে মঙ্গোলিয়ার মরুভূমিতে পাওয়া একটি ভেলোসির‍্যাপ্টরের ফসিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা ২০০৭ সালে প্রমাণ পান যে ভেলোসির‍্যাপ্টরদের সামনের বাহুর হাড়ে (আলনা) কুইল নব ছিল। পাখনার পালক হাড়ের যেখানে গিয়ে যুক্ত হয়, সেখানে একটুখানি উঁচু অংশ থাকে, যাকে কুইল নব বলা হয়। আধুনিক পাখিদের হাড়ে এটা দেখা যায়। ১৯৯৩ সালে যখন জুরাসিক পার্ক মুক্তি পায়, তখন অবশ্য ভেলোসির‍্যাপ্টরদেরপালক থাকার ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না। পরে বিজ্ঞানীরা শুধু ভেলোসির‍্যাপ্টর না, আরও অনেক ডাইনোসরের গায়েই পালক থাকার প্রমাণ পেয়েছেন।

ছবি A ও B-তে ভেলোসির্যাপ্টরের কুইল নব দেখানো হয়েছে, যা টার্কি ভালচারের ডান আলনার সঙ্গে মিল আছে (ছবি C ও D)
ছবি: সায়েন্স ম্যাগাজিন

শুধু চামড়ার ব্যাপারই নয়, ডাইনোসরের আকার নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে জুরাসিক পার্ক ফ্র্যাঞ্চাইজের ছবিগুলো দেখে। ভেলোসির্যাপ্টরদের প্রথম ছবি থেকেই যত বড় করে দেখানো হয়েছে, এরা বাস্তবে মোটেও এতটা বড় ছিল না। ভেলোসির্যাপ্টররা আসলে একটা বড় টার্কির আকারের ছিল, লম্বায় সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় ফুট, উচ্চতায় তিন ফুটের মতো হতো এরা। কিন্তু জুরাসিক পার্ক-এ এদের দ্বিগুণের বেশি বড় করে দেখানো হয়েছে। সিনেমায় জুরাসিক পার্ক-এর কম্পিউটার প্রোগ্রামার ডেনিস নার্ডি একটা ক্যানিস্টারে করে ডাইনোসরের ভ্রূণ চুরি করে যখন জিপে করে পালাচ্ছিল, একপর্যায়ে তাকে ডিপলোসোরাস আক্রমণ করে চোখেমুখে বিষাক্ত তরল ছিটিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। ডিপলোসরাসকে সেখানে যত ছোট দেখানো হয়েছে, বাস্তবে এরা তার চেয়ে অনেক বড় ছিল। এরা প্রায় ২৩ ফুট লম্বা হতো, যদিও ছবিতে এদের মাত্র ৫ ফুট লম্বা দেখানো হয়েছে। ভেলোসির্যাপ্টরদের সঙ্গে বিভ্রান্তি এড়াতে স্পিলবার্গ এই কাজ করেছিলেন। ডিপলোসরাসের ওই দৃশ্যেই দেখানো হয়েছে, এদের গলার চারপাশে ফিন রয়েছে, যা কিনা তারা গুটিয়ে রাখতে পারে। বাস্তবে বিজ্ঞানীরা এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাননি। এদের যতটা নিরীহ, আত্মরক্ষায় আগ্রহী ডাইনোসর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এরা মোটেও তেমন ছিল না। আসলে এরা মাংসাশী ডাইনোসর ছিল এবং এদের সময়ের সবচেয়ে বড় মাংসাশী ডাইনোসরদের মধ্যে ছিল একটি।

জুরাসিক পার্ক ছবিতে সবচেয়ে ভয়ংকর মাংসাশী ডাইনোসর হিসেবে অবশ্য দেখানো হয়েছে টি.রেক্সকে। টি.রেক্স কিন্তু সবচেয়ে বড় মাংসাশী ডাইনোসর ছিল না। সবচেয়ে বড় মাংসাশী ডাইনোসর ছিল স্পাইনোসরাস। সমস্যা হচ্ছে জুরাসিক পার্ক ৩-এ দেখানো স্পাইনোসরাস আর জুরাসিক পার্ক-এ দেখানো টিরানোসরাসের মধ্যে আকারের পার্থক্য করা মুশকিল। বাস্তবে স্পাইনোসরাস টি.রেক্সের তুলনায় দেড় গুণ পর্যন্ত বড় হতো।

জুরাসিক পার্ক-এ টি.রেক্স বেশ জোরে দৌড়াতে পারে বলে দেখানো হয়েছে। এত জোরে যে এরা দৌড়ে একটা জিপকে ধরে ফেলতে পারে। বাস্তবে টি.রেক্স ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) বেগে দৌড়াতে পারত। ফলে একটা জিপ যদি ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে চলে, টি.রেক্সের পক্ষে কিছুতেই একে দৌড়ে ধরা সম্ভব নয়। আরেকটা মজার জিনিস জুরাসিক পার্ক-এ দেখানো হয়েছে—টি.রেক্স চোখে খুব ভালো দেখতে পায় না। কাজেই নড়াচড়া না করলে এদের পক্ষে মানুষের উপস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা বরং উল্টো প্রমাণ পেয়েছেন—এদের দৃষ্টিশক্তি আধুনিক বাজপাখি কিংবা ইগলের চেয়ে ভালো ছিল। মস্তিষ্কের তুলনায় টি.রেক্সের অলফ্যাক্টরি বাল্ব এবং নার্ভের আকার থেকে এটাও বোঝা যায় যে এদের ঘ্রাণশক্তি শকুনের মতো ছিল। ফলে সিনেমায় টি.রেক্সকে যেমন বুদ্ধিবিহীন নিরেট মস্তিষ্কের অধিকারী দানব হিসেবে দেখানো হয়েছে, বাস্তবে ঘটনা মোটেও সেটা ছিল না!

জুরাসিক পার্ক-এর ছবিগুলোতে উড়ন্ত ডাইনোসর হিসেবে বেশ ভালোভাবেই ফিচার করা হয়েছে টেরানোডনকে। এরা আসলে ডাইনোসর নয়।

ডাইনোসরের বুদ্ধিমত্তা নিয়েই কথা হচ্ছে, তাহলে আলাদা করে ভেলোসির্যাপ্টরের কথা বলতেই হয়। ১৯৯৩ সালের জুরাসিক পার্ক ছবিতে দেখানো হয়েছে এরা ‘প্যাক হান্টার’ ছিল, দল বেঁধে শিকার করত। ২০১৫ সালের জুরাসিক ওয়ার্ল্ড-এও এই ব্যাপার দেখানো হয়েছে। জুরাসিক পার্ক ৩-এর শুরুর দিকের একটা দৃশ্যে ড. অ্যালান গ্র্যান্ট ড. এলি স্যাটলারকে বলছিলেন যে এরা ডলফিন, তিমি এমনকি আধুনিক প্রাইমেটদের চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান ছিল। ভেলোসির্যাপ্টরদের মস্তিষ্কের আকার ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা অবশ্য এমন কোনো প্রমাণ পাননি। এমনকি এরা আধুনিক পাখিদের মতো বুদ্ধিমান ছিল কি না, তা নিয়েও বিজ্ঞানীদের সন্দেহ আছে। এদের দল বেঁধে শিকারের পক্ষেও বিজ্ঞানীরা তেমন কোনো প্রমাণ পাননি। বরং গবেষণায় দেখা গেছে যে শিকার ও খাবার সংগ্রহের জন্য এরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করত। এরা যে দল বেঁধে শিকার করত, ব্যাপারটা অনুমান করা হয় আমেরিকার মন্টানাতে পাওয়া একসঙ্গে থাকা বেশ কতগুলো ডাইনোনিকাসের ফসিল এবং টেনন্টোসরাসের ফসিল থেকে। ডাইনোনিকাস এবং ভেলোসির্যাপ্টর একই পরিবারের (ঋধসরষু) ডাইনোসর এবং ভেলোসির্যাপ্টরদের মতো এদের পেছনের পায়ে কাস্তে আকৃতির বড় নখর ছিল। উদ্ধার করা ফসিল থেকে এটা অনুমান করা হয় যে ডাইনোনিকাস দল বেঁধে টেনন্টোসরাসকে শিকার করত। এই অনুমানও বিতর্কিত এবং ফসিল রেকর্ড থেকে সরাসরি ভেলোসির্যাপ্টরদের দল বেঁধে শিকার করার কোনো প্রমাণ আসলে পাওয়া যায়নি। এমনিতে এরা সামাজিক ছিল এই অর্থে যে এরা কাছাকাছি বসবাস করত।

জুরাসিক পার্ক-এর ছবিগুলোতে উড়ন্ত ডাইনোসর হিসেবে বেশ ভালোভাবেই ফিচার করা হয়েছে টেরানোডনকে। এরা আসলে ডাইনোসর নয়। ডাইনোসর হিসেবে বিজ্ঞানীরা যেসব প্রাণীকে চিহ্নিত করেছেন, তারা সবাই ডাইনোসরিয়া বর্গের দুটো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত: সরিস্কিয়া ও অরনিথিস্কিয়া। টেরনোডন এই গ্রুপ দুটির কোনোটিরই অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং এরা টের্যাসরিয়া বর্গের অন্তর্ভুক্ত। টের্যাসররা প্রথম উড়ন্ত মেরুদণ্ডী প্রাণী ছিল। জুরাসিক পার্ক ৩ এবং জুরাসিক ওয়ার্ল্ড-এ যেমন দেখানো হয়েছে, এরা পায়ের থাবা দিয়ে মানুষকে মাটি থেকে ছোঁ মেরে তুলে নিতে পারত, বাস্তবে কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না। কারণ, এদের আধুনিক পাখিদের মতো থাবা ছিল না। তবে আগের ছবিগুলোতে একটা জিনিস ভুল দেখানো হলেও জুরাসিক ওয়ার্ল্ড-এ শেষ পর্যন্ত একটা জিনিস ঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এদের ব্যাপারে। সেটি হচ্ছে টেরানোডনদের বিশাল লম্বা চঞ্চু থাকলেও এদের মুখে দাঁত ছিল না। এরা সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করত। তবে জুরাসিক ওয়ার্ল্ড-এ যেমন দেখানো হয়েছে, এরা পুলের ভেতরে ডুব দিয়ে মানুষকে পানির নিচ থেকে ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে, বাস্তবে সেটা এদের জন্য আদৌ সম্ভব ছিল কি না, সেটা বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না।

টের্যাসররাই একমাত্র প্রাণী নয়, যারা জুরাসিক ওয়ার্ল্ড-এ ডাইনোসর ছিল না, বরং অন্য গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী ছিল। এমন একটি হচ্ছে মোসাসরাস। এরা রেপ্টিলিয়া শ্রেণির (ঈষধংং) মেরুদণ্ডী প্রাণী ছিল। জুরাসিক ওয়ার্ল্ড-এ দেখানো হয়েছে, এরা পানির নিচ থেকে ঝাঁপ দিয়ে ওপরে এসে শিকার করতে পারে। বাস্তবে এরা এভাবে শিকার করত কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। এদের যে বিশাল আকৃতির দেখানো হয়েছে, বাস্তবে এরা মোটেও এত বড় ছিল না। এরা সর্বোচ্চ ৪০ ফুটের মতো লম্বা হতো। এর চেয়ে বড় হওয়া সম্ভব যদি কৃত্রিমভাবে, জেনেটিক্যালি মডিফাই করে এদের তৈরি করা হয়। জুরাসিক পার্ক ও জুরাসিক ওয়ার্ল্ড-এ অবশ্য সেভাবেই ডাইনোসরগুলো তৈরি করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ডাইনোসর

আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত কোনো প্রাণীকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয়, সেটা সম্ভব কেবল ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে, জেনেটিকস নিয়ে আমাদের যে আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি, তা ব্যবহার করে। সমস্যা হচ্ছে ডাইনোসরের ক্লোন করার জন্য ডাইনোসরের ডিএনএ দরকার। অর্ধশত মিলিয়ন বছর ধরে মাটি আর পাথরের নিচে চাপা পড়ে থাকা ডাইনোসরের ফসিল থেকে সেটা পাওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীদের হিসাবে ডিএনএ সাধারণভাবে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন বছরের মধ্যে ডিএনএ অণুর বন্ধনগুলো এমনভাবে ভেঙে যায় যে সেটা থেকে সঠিকভাবে কোনো জেনেটিক তথ্য আর উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। কাজেই জুরাসিক ওয়ার্ল্ড-এ দেখানো ইনডোমিনাস রেক্সের মতো ডাইনোসর জিন স্প্লাইসিং করে তখনই তৈরি করা সম্ভব হতো, যখন আমরা টি.রেক্স কিংবা কোনো র্যাপ্টরের ডিএনএ অক্ষত অবস্থায় পেতাম। সেটা পাওয়া সম্ভব নয়।

কাজেই জুরাসিক পার্ক ফ্র্যাঞ্চাইজের ছবিগুলোতে যেমন একটা আস্ত থিম পার্ক বানিয়ে ফেলা হয়েছে কৃত্রিমভাবে বানানো ডাইনোসর দিয়ে, বাস্তবে সে রকম কিছু কোনো দিন বিজ্ঞানীরা তৈরি করতে পারবেন, সেটা আশা করা বোকামি হবে। ডাইনোসরদের দেখতে হলে সে জন্য সিনেমা হলে বসে থ্রিডিতে একের পর এক শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেখা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় আসলে নেই। শুধু মনে রাখলেই হবে, ডাইনোসরগুলোর বেশির ভাগই ফিকশনাল, বাস্তবে তারা আমাদের কল্পনার জগতের মতো ছিল না!

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, দ্য গার্ডিয়ান