প্রাণীর চোখে কেমন দেখায় পৃথিবী

একটি মৌমাছির চোখে, যেভাবে এটা ফুলকে দেখেছবি: পিএলওএস বায়োলজি

পৃথিবীতে দেখার মতো অনেক সুন্দর জিনিস আছে। পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র সৈকত—কত কী! এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষ ছুটে যায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে। মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণীও কি এ সৌন্দর্য উপভোগ করে? আমরা যেভাবে পৃথিবীকে দেখছি, অন্যান্য প্রাণীও কি একইভাবে দেখে?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন নতুন একধরনের ক্যামেরা। কোন প্রাণী কোন বস্তুকে কীভাবে দেখে, তা বোঝা যাবে এ ক্যামেরার সাহায্যে।

সাধারণত প্রাণীরা বিভিন্ন ধরনের রং দেখতে পায়। কোন প্রাণী কোন বস্তুকে কীভাবে দেখবে, তা নির্ভর করে প্রাণীর চোখের রেটিনায় থাকা কোন (Cone) কোষের ওপর। মানুষের চোখে প্রায় ৬ মিলিয়ন বা ৬০ লাখ কোন কোষ আছে। লাল, নীল ও সবুজ রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বোঝার জন্য রয়েছে ৩ ধরনের কোন কোষ। এই তিন রঙের মিশ্রণের কারণে যেকোনো বস্তুকে রঙিন দেখায়। ফলে আমরা যেকোনো জিনিস আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারি। 

পাখির চোখে অরেঞ্জ সালফার নামে একধরনের প্রজাপতি, নিচে ডান কোণায় মানুষ যেভাবে দেখে, তা দেখানো হয়েছে
ছবি: পিএলওএস বায়োলজি

তবে সব মানুষের এই তিন ধরনের কোষ সমান সক্রিয় হয় না। তাঁদের বলে বর্ণান্ধ। তাঁরা সব রং দেখতে পান না। নানারকম রং তাঁদের চোখে একই রকম লাগে। অনেকে আবার একটা নির্দিষ্ট রং দেখতে পান না। হয়তো কেউ নীল ও সবুজের পার্থক্য বোঝেন না। তাঁর কাছে সবই নীল বা সবুজ লাগে। এটাও একধরনের বর্ণান্ধতা। 

আবার অনেক প্রাণী আছে, যেগুলো দৃশ্যমান বর্ণালীর বাইরের রং দেখতে পায়। যেমন হামিংবার্ড, বল্গা হরিণ ও মৌমাছি অতিবেগুনি রং দেখতে পায়, যা মানুষ দেখতে পায় না

তবে কিছু প্রাণী আছে, যেগুলো মানুষের চেয়ে কম রং দেখতে পায়। উদাহরণস্বরূপ কুকুরের কথা বলা যায়। এরা বেগুনি, সবুজ, লাল ও কমলা রঙের চেয়ে নীল ও হলুদ রং ভালো দেখতে পায়। আবার বিড়ালের রয়েছে রং শনাক্তকারী দুধরনের কোন কোষ। তাই বিড়াল নীলচে-বেগুনি ও হলদেটে-সবুজের চেয়ে লালচে-কমলা রং কম দেখতে পায়। 

আবার অনেক প্রাণী আছে, যেগুলো দৃশ্যমান বর্ণালীর বাইরের রং দেখতে পায়। যেমন হামিংবার্ড, বল্গা হরিণ ও মৌমাছি অতিবেগুনি রং দেখতে পায়, যা মানুষ দেখতে পায় না। এ কারণেই মৌমাছিরা ফুলের মধু (আসলে অমৃত, ফুল থেকে অমৃত নিয়ে মৌচাকে ফেরে মৌমাছি; সেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হয় মধু) খুঁজে পায়। যেহেতু আমরা অতিবেগুনি আলো দেখতে পাই না, তাই মৌমাছি কীভাবে এ আলো দেখে অমৃত খোঁজে, তা আমরা অনুভব করতে পারি না। 

আরও পড়ুন

ঠিক এই কারণেই এ ধরনের ক্যামেরা তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই ক্যামেরার সাহায্যে তাঁরা দেখতে চান, প্রাণীরা আসলে কোন রং কীভাবে দেখে। তাঁদের চোখে পৃথিবীটা কেমন! ২৩ জনুয়ারি পিএলওএস বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। ক্যামেরাটি তৈরি করেছেন যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ভার্জিনিয়ার জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। 

এই ক্যামেরার সাহায্যে ৪টি ভিন্ন রঙের চ্যানেলে ভিডিও রেকর্ড করা হয়। রংগুলো হলো লাল, নীল, সবুজ ও অতিবেগুনি। প্রাণীর চোখের ফটোরিসেপ্টরের সাহায্যে ডেটা প্রক্রিয়াজাত করে প্রাণীর দৃষ্টির সঠিক উপস্থাপনা তৈরি করে। জানা গেছে, তাঁদের এই ছবিগুলো ৯২ শতাংশ সঠিক।

সূত্র: কসমস ডট কম, পপসায়েন্স ডট কম