রক্তের রং লাল কেন?

কিছু নিম্ন শ্রেণির প্রাণী (বিশেষ করে কীটপতঙ্গ) ছাড়া বেশিরভাগ প্রাণীর রক্তের রং লাল। রক্ত সাধারণত রক্তরস ও রক্তকণিকা দিয়ে গঠিত। এই রক্তকণিকা আবার তিন প্রকার—লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা। মূলত এই লোহিত রক্তকণিকার কারণেই রক্ত লাল হয়।

দেহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে লোহিত রক্তকণিকা। শ্বাস নেওয়ার সময় যে অক্সিজেন গ্রহণ করি, তা দেহের কোষে কোষে পৌঁছে দেওয়া তার কাজ। আবার প্রতিটি কোষ থেকে কাবর্ন ডাই-অক্সাইড বা অন্যান্য বর্জ্য উপাদান বহন করে ফুসফুসে পৌঁছে দেয় এ কণিকা। তা না হলে কোনো প্রাণীর পক্ষেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না।

লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামে একধরনের প্রোটিন থাকে। এর রং উজ্জ্বল লাল। কারণ, হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে যুক্ত থাকে আয়রন বা লোহা। হিমোগ্লোবিনই মূলত দেহের ফুসফুস ও প্রতিটি কোষের মধ্যে অক্সিজেন বা কার্বন ডাই-অক্সাইড আদান-প্রদান করে।

হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে বিশুদ্ধ হয়। এ সময় রক্ত উজ্জ্বল লাল দেখা যায়। তারপর হৃৎপিণ্ডের পাম্পের চাপে বিশুদ্ধ রক্ত কোষে কোষে চলে যায় বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিয়ে। ফলে কোষগুলো নিজ নিজ কাজ করতে পারে। কোষ নিজের কাজ শেষ করলে সেখানে বর্জ্য হিসেবে তৈরি হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড। রক্ত কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে, এর বদলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিয়ে দূষিত হয়ে যায়। এ দূষিত রক্ত দেখতে কিছুটা কালচে বর্ণের। এটি আবার রক্তের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছে। ফুসফুস কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেয় নিশ্বাসের সঙ্গে।

সাধারণত দেহের ধমনী পথে বিশুদ্ধ রক্ত এবং শিরা পথে দূষিত রক্ত চলাচল করে। এ কারণেই ধমনীর রক্ত বেশি লাল দেখায়। শিরার রক্ত কিছুটা নীলচে লাল।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা