বিড়াল কেন ঘুমকাতুরে

অনেকেই বিড়াল ভীষণ পছন্দ করেন। তুলতুলে আদুরে এই প্রাণীকে পছন্দ করার জন্য অবশ্য আলাদা কারণ প্রয়োজন নেই। পোষা প্রাণী হিসেবে পৃথিবীজুড়েই বিড়ালের বেশ কদর আছে। বিড়ালের নানা গুণ থাকলেও প্রচুর মানুষ আছেন, যাঁরা বিড়াল পছন্দ করেন না। এর একটা কারণ, বিড়াল ভয়াবহরকম অলস প্রাণী। আমাদের কাজকর্মে কোনো উপকারে না এলেও, সারাদিন ঘুম চাই তার।

জার্মানির জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক—স্কট ক্যামবেল ও আইরিন টবলার তাঁদের এক গবেষণায় দেখান, গৃহপালিত বিড়ালগুলো প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা ঘুমায়। এমনকি দিনে ১৭ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমানোও এদের জন্য অস্বাভাবিক নয়। তবে বিড়ালের এ ঘুম একসঙ্গে হয় না। একবারের ঘুমে এরা মাত্র ৫০ থেকে ১১০ মিনিট সময় ব্যয় করে।

আপনার বিড়ালটি যত ঘন্টাই ঘুমাক না কেন, একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই মাথায় এসেছে—বিড়াল কেন এত ঘুমায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করব আমরা। তবে তার আগে জানতে হবে, বিড়াল কোন কোন সময়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে? অর্থাৎ কখন তারা সবচেয়ে চঞ্চল থাকে, চলাফেরা করে বা শিকার ধরে?

যুক্তরাজ্যের ল্যাংকশায়ারের প্রাণিমনোবিশেষজ্ঞ ডেভিড স্যাণ্ডসের মতে, বিড়ালের সবচেয়ে সক্রিয় থাকার সময়টা হলো ভোর ও সন্ধ্যাবেলা। এ ধরনের প্রাণীদের ক্রেপাসকুলার বা আবছায়াচর প্রাণী বলা হয়। নিশাচর প্রাণীর মতো এরা ঘোর অন্ধকারে সক্রিয় থাকতে পারে না।

ঘুমকাতুরে বিড়াল

তিনি বলেন, ‘বিড়ালের এমন হওয়ার কারণ, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে কম আলোর শিকারী বা আবছায়াচর প্রাণী হিসেবে বিড়ালের জিন বিকশিত হয়েছে। তাদের দৃষ্টিশক্তি উষা বা গোধূলীর আবছায়া আলোয় সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করার মতো করে অভিযোজিত হয়েছে। তাই এ সময় প্রাণীগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে দেখতে পায়। সেজন্যই বিড়াল এসব সময়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।

সক্রিয় থাকার জন্য বিড়ালের প্রচুর শক্তি ব্যয় হয়। শিকার খুঁজে বের করা, ধাওয়া করা, ধরা ও খাওয়া—সব মিলিয়ে দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার।

আবছায়াচর প্রাণী হওয়ায় দিনের মূলত দুটি সময় এদের সক্রিয় থাকতে হয়। নিশাচর বা দিবাচর প্রাণীর মতো শুধু রাত বা দিনে সক্রিয় থাকলে চলে না। দুটো সময়ে সক্রিয় থাকার জন্যই এদের মধ্যে শক্তি সঞ্চয়ের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। আর এ শক্তি জমানোর জন্য অলস সময়ে ঘুমানোর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!

হ্যাঁ, গৃহপালিত বিড়ালদের খাবার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। তারপরও লাখ লাখ বছর ধরে জিনে বহন করা সহজাত প্রবৃত্তির কারণে এরা শক্তি জমা করে। সকাল-সন্ধ্যায় সক্রিয় থাকার জন্য অলস হয়ে ঘুমায় রাতদিনের প্রায় অর্ধেকটা সময়।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস