জীববৈচিত্র্যে কীটনাশকের প্রভাব

‘কীটনাশক’ শব্দের সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত। কৃষিক্ষেত্রে অতিপ্রয়োজনীয় এই উপাদান পোকামাকড় দমন করে ফসলকে বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষায় কীটনাশক হিসেবে নানা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, এই রাসায়নিক পদার্থগুলোর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে আশপাশের জীবজগৎ ও খাদ্যশৃঙ্খলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে কি না?

মাটি কিংবা গাছপালার ওপরে কীটনাশক ছিটিয়ে অথবা বাতাসে আণুবীক্ষণিক ড্রপ দ্বারা ছড়িয়ে কৃষিক্ষেত্রে এমন বিভিন্ন রকম কীটনাশকের ব্যবহার বর্তমানে দেখা যায়। তবে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে কীটনাশকের ধরন যেমনই হোক না কেন, গঠনগতভাবে এগুলো জৈব ও রাসায়নিক কীটনাশক—এই দুইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

জৈব কীটনাশকের একটি উদাহরণ হলো নিকোটিন, যার উৎপাদন প্রাকৃতিক উপায়ে উদ্ভিদের মাধ্যমে হয়। তবে প্রকৃতিতে পাওয়া গেলেও এটি অনেক সময় রাসায়নিক কীটনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। নিকোটিনের নিউওনিকোটিনয়েডসের কারণে পোকামাকড় নিজেদের পেশির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং মারা যায়।

তা ছাড়া রাসায়নিক কীটনাশকের মধ্যে পরিচিত কিছু নাম হলো মারকারি, আর্সেনিক, কপার ইত্যাদি। ডাইক্লোরো ডাইফেনাইল ট্রাইক্লোরো ইথেন‍ বা ডিডিটিকে বলা হয় বিশ্বের প্রাচীনতম ও সর্বাধিক কার্যকর কীটনাশক, যা নিউরোটক্সিন হিসেবে কাজ করে। এর কার্যক্রম অনেকটা রাসায়নিক অস্ত্র প্রাণঘাতী ‘সারিন গ্যাস’-এর মতো। এটির আবিষ্কার ১৮৭৪ সালে। তবে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতার কথা বিশ্বের কাছে অনেকটা অজানাই ছিল। ১৯৩৯ সালের পরে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ম্যালেরিয়া জীবাণুবাহী মশা মারতে এই গ্যাস ব্যবহৃত হয়। এরপর থেকে কীটনাশক হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয় ব্যাপকভাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি ধীরে ধীরে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং খাদ্যশৃঙ্খল ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। একপর্যায়ে এই কীটনাশকের কারণে উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের পেরেগ্রিন ফ্যালকন নামে একপ্রকার পরিযায়ী বাজপাখি নির্মূল হয়ে যায়।

খাদ্যশৃঙ্খলে বিরূপ প্রভাব ফেলার কারণে ডিডিটি কীটনাশককে ১৯৮৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এবং বর্তমানে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালেও এটি বিশ্বের অনেক দেশের বাজারে পাওয়া গেছে।

কীটনাশক যেভাবে কাজ করে?
Kazi Akash

কীটনাশক কীভাবে কাজ করে?

ডিডিটির মতো আরও বেশ কিছু কীটনাশক আছে, যেগুলো নিউরোটক্সিনের মতো কাজ করে। ডিডিটি পোকামাকড়ের দেহের ভেতরে গিয়ে সেগুলোর স্নায়ুপথকে পুড়িয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর মৃত্যু ঘটায়।

গ্রন্থনা: জাহিন যাঈমাহ্ কবির, শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: সায়েন্স ইলাস্ট্রেটেড