রক্তের রং কি সবুজ বা নীল হতে পারে?

রক্তের রং কি লাল? নাকি সবুজ বা নীলও হতে পারে? না, এলিয়েনের কথা বলছি না। মানুষের কথাই বলছি। উত্তর ‘হ্যাঁ’ শুনে চমকে যাবেন না। বিরল পরিস্থিতিতে আসলেই এমনটা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে আলোচনা করব। তার আগে রক্ত নিয়ে একটু বলি।

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রক্তের ব্যাপারে জানতেন। ১৬২৮ সালে ইংরেজ চিকিৎসক উইলিয়াম হার্ভে ব্লাড সার্কুলেশন বা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। ১৬৬৫ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক রিচার্ড লোয়ার প্রথম ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত সঞ্চারনের চেষ্টা করেন। রক্ত সঞ্চারন মানে, একটি প্রাণীর দেহ থেকে অন্য প্রাণীতে রক্ত স্থানান্তর। একটা কুকুরকে অন্য একটা কুকুরের দেহ থেকে রক্ত সঞ্চারিত করে তিনি বাঁচিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

১৬৬৭ সালে ফ্রান্সের জ্যাঁ-ব্যাপটিস্ট ডেনিস আলাদা আলাদাভাবে ভেড়ার দেহে থেকে ১৫ বছরের একটি বাচ্চা এবং এক গর্ভবতী নারীর দেহে সফলভাবে রক্ত সঞ্চারন করেছিলেন। সে যাত্রায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে গেলেও ভয়ঙ্কর অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত হন। পরের ১০ বছরে এরকম অনেক রক্ত সঞ্চারনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে রোগীরা বেঁচে গেলেও ভয়ঙ্কর অ্যানিমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন প্রায় সবাই। তাই আইন করে রক্ত সঞ্চারনের এ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করা হয়।

১৭৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিপ সিং ফিজিক প্রথম মানুষের রক্ত সঞ্চারন করেন। কিন্তু এ তথ্য তখন প্রকাশ করেননি তিনি। তাই এই তথ্যের সত্যতা নিয়েও আছে মত-দ্বিমত। ১৯০০ সালে প্রথম মানুষের রক্তের গ্রুপকে তিন ভাগে ভাগ করেন অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার। গ্রুপগুলো হলো এ, বি ও সি। পরে অবশ্য রক্তের গ্রুপ সি বদলে গিয়ে ‘ও’ হয়েছে। এরপর ১৯০২ সালে ‘এবি’ রক্তের গ্রুপ শনাক্ত করেন ল্যান্ডস্টেইনের দুই সহকর্মী আলফ্রেড ডেকাস্টেলো এবং আদ্রিয়ানো স্টার্লি। ল্যান্ডস্টেইনার ১৯৩০ সালে তাঁর এ আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার পান।

এবারে একটু বিচিত্র একটা প্রশ্ন করি। মানুষের রক্তের গ্রুপ কি পরিবর্তিত হতে পারে? সাধারণত, মানুষের রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হয় না। তবে রক্তের ধরন পরিবর্তিত হতে পারে। এটা খুবই বিরল ঘটনা। রক্তের ধরন পরিবর্তনের বিষয়টিও অন্যান্য পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন অস্থি-মজ্জার প্রতিস্থাপন বা নির্দিষ্ট ধরনের লিউকেমিয়া বা সংক্রমণ। তবে রক্তের গ্রুপের এ সব পরিবর্তন কখনো স্থায়ী হয় না।

এবার সেই প্রশ্নটিতে ফেরা যাক। সব মানুষের রক্তের রং-ই কি লাল? নাকি মানুষভেদে সবুজও হতে পারে? হলিউডের চলচ্চিত্রে ‘হাল্ক’ নামে একটি চরিত্রের রক্ত যেমন সবুজ, সেরকম। সত্যি বলতে, মানুষের রক্তের রং লাল ছাড়াও অন্য রঙের হতে পারে। হিমোগ্লোবিনের একটি অণু তার গঠনে পরিবর্তন করে একটি সালফার পরমাণুকে অন্তর্ভুক্ত করলে সালফোহিমোগ্লোবিনে পরিণত হয়। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে রক্তের রং বদলে যেতে পারে। হিমোগ্লোবিনে অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করার জন্য লোহার পরমাণু থাকে। সালফোহিমোগ্লোবিনে সালফার পরমাণু লোহাকে অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া হতে বাধা দেয় এবং নিজে অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। ফলে রক্ত গাঢ় নীল, সবুজ বা কালো দেখায়। এটি এক ধরনের রোগ। তবে সালফোহিমোগ্লোবিনেমিয়ার চিকিৎসা অত্যন্ত সহজ। শুধু অপেক্ষা করলেই হয়। ঠিক হয়ে যায়।

লোহিত রক্তকণিকার জীবনকাল প্রায় ১২০ দিনের। এরপর রক্তকণিকা ভেঙে যায়। উপাদানগুলো তারপর পুনর্গঠিত হয়। তাই চার মাসের ব্যবধানে সালফোহিমোগ্লোবিন ধারণ করা যেকোনো ব্যক্তির লোহিত রক্তকণিকা ঠিক হয়ে যায়। তখন রক্ত আবার লাল দেখায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণি, সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা

সূত্র: রেডক্রস ব্লাড ডট ওআরজি, উইকিপিডিয়া ও ডিসকোভারি ডট কম