প্রাণিজগৎ
ক্যামেরার চোখে পোকামাকড়ের চমকপ্রদ জগৎ
আমাদের চারপাশে অসংখ্য পোকামাকড়ের বাস। এগুলোর বেশির ভাগই থাকে আমাদের নজরের বাইরে। এদের আকার ছোট, চলাফেরা দ্রুত—ছুটছে প্রায় সারাক্ষণ। ফলে আমরা এদের স্পষ্টভাবে দেখতে পাই না। কিন্তু কাছাকাছি যেতে পারলে, সূক্ষ্মভাবে খতিয়ে দেখতে পারলে এদের অসাধারণ সৌন্দর্য এবং জীবনের জটিলতায় মুগ্ধ হতে হয়।
এ বছরের রয়েল এন্টোমোলজিক্যাল সোসাইটি ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী আলোকচিত্রীরা তাঁদের ক্যামেরায় তুলে এনেছেন পোকামাকড়ের এ অসাধারণ জগৎ। এ প্রতিযোগিতার আলোকচিত্রীদের তোলা পোকামাকড়ের চমৎকার কিছু ছবি বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
১. ডানায় তার ঢেউ খেলে যায়
এ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মনোমুগ্ধকর ঢেউ খেলানো নকশা-গায়ের একটি সবুজ মথ শ্যাওলা ঢাকা একটি গাছের ডালে বিশ্রাম নিচ্ছে।বনভ্রমণে একটু বিরতি নিয়ে নিজের অপূর্ব সৌন্দর্য প্রদর্শনে নেমেছে যেন।আলেকজান্ডার ম্যাকেরাচার এই অসাধারণ দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেছেন।ঢেউ খেলানো নকশাবিশিষ্ট সবুজ এই মথের বৈজ্ঞানিক নাম সিনক্লোরা ইরোটা(Synchlora aerata)।
২. চোখে রাখো চোখ
পিট বারফোর্ডের ক্যামেরার লেন্সে সবুজ চোখ রেখে কৌতূহলী দৃষ্টিতে উঁকি মারছে ড্যামসেলফ্লাইটি।ড্যামসেলফ্লাইয়ের যৌগিক চোখে থাকে হাজার হাজার আলাদা ফটোরিসেপ্টর ইউনিট।এগুলোর সাধারণ নাম ওমাটিডিয়া।প্রতিটি ওমাটিডিয়ামে আলাদা কর্নিয়া থাকে।এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য এদের অন্যান্য পোকামাকড়ের তুলনায় উচ্চ রেজ্যুলুশনে নড়াচড়া ও রং দেখতে সাহায্য করে।
৩. ঘুমন্ত কোকিল
ঘুমন্ত অবস্থায় এই কোকিল-মৌমাছিগুলো পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে ম্যান্ডিবল বা চোয়াল দিয়ে ঘাসে আটকে রেখেছে নিজেদের।মনোমুগ্ধকর এই ছবি তুলেছেন লুক চেম্বার্স।রয়েল এনটোমোলজিক্যাল সোসাইটি ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় সামগ্রিকভাবে বিজয়ী হয়েছেছবিটি।অন্যান্য মৌমাছির বাসায় ডিম পাড়ার জন্য এরা বেশি পরিচিত।অনেকটা কোকিল পাখির মতো,যার নামানুসারে এদের নামকরণ করা হয়েছে।
৪. প্রাগৈতিহাসিক
এই পোকাটি নিউরোপটেরা গোষ্ঠীর অন্তর্গত।সামনের পা দুটি কাঁটাযুক্ত, বড় বড় চোখ।পোকাটি প্রায় ৯৯ মিলিয়ন বছর পুরনো একটি অ্যাম্বার তথা গাছের কষ বা রজনের মধ্যে আটকে রয়েছে।মায়ানমারের কাচিন রাজ্যের হুকং উপত্যকা থেকে পাওয়া গেছে এটি।ছবিটিতুলেছেনএনরিকোবোনিনো।
৫. আশ্রয়প্রার্থী ভীমরুল
অক্টোবরের শেষদিকে একটি ইউরোপীয় ভীমরূলকে বৃষ্টি থেকে আশ্রয় নিতে দেখা যায় এই ছবিতে।বৃষ্টির কারণে এদের গতি কমে যায়।ফলে ছবি তোলা সহজ হয়।আলোকচিত্রী পিট বারফোর্ড ছবিটি সম্পর্কে বলেন, ‘আমি এটিকে একটি লাঠির সাহায্যে তুলে নিই, ভীমরূলটি বাসায় ফেরার আগে তুলে নিই ছবি।’
৬. জাম্পিং ব্রিস্টেলটেলের প্রতিকৃতি
জাম্পিং ব্রিস্টেলটেল পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আদিমতম কীটপতঙ্গগুলোর একটি।ডাইনোসরদেরও আগে, প্রায় ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি বছর আগেই পৃথিবীতে ছিল এরা।এই অনন্য, উড়তে অক্ষম পোকামাকড়গুলো প্রায়ই পাথরের নিচে লুকিয়ে থাকে।বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এরা কয়েক সেন্টিমিটার বাতাসে লাফ দিতে পারে।কিছু প্রজাতির শরীরে আঁশের আবরণ থাকে, যা এদের আরও অনন্যতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে যেন।ছবিটি তুলেছেন টিম জোনাস।
৭. একটু বিরতি নিচ্ছি
ছবিটি তুলেছেন টমাস রবার্টস।তিনি এই ছবি প্রসঙ্গে বলেন, এই দুটি পুরুষ কমলা-টিপ প্রজাপতি সম্ভবত এই লাইকেন-আবৃত শাখায় বিশ্রাম নিচ্ছিল তখন।আমি কৃতজ্ঞ যে এরা আমাকে এই রঙিন দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করার মতো যথেষ্ট সময় দিয়েছিল।এরা খুব সম্ভবত আমি থাকাকালে একদমই অনিরাপদ বোধ করেনি।