চারদিকে কাঠফাটা রোদ। অসহ্য গরম। গত মাসেই আগের ৫৮ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে রাজধানী ঢাকায়। বোঝাই যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরমের তীব্রতা বেশি।
এ বছর যে গরমের তীব্রতা বেশি হবে, বিজ্ঞানীরা আগেই এর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, এ বছর ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণতম বছর হিসেবে রেকর্ড হতে পারে। গত বছর যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়। পাশাপাশি আরও জানানো হয়, এ বছর বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লবের আগের (১৮৫০-১৯০০) সময়ের চেয়ে গড়ে ১ দশমিক ০৮ থেকে ১ দশমিক ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকবে।
২০২৩ সাল যে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা যে বাড়বে সেই পূর্বাভাস দেওয়ার নেতৃত্ব ছিলেন যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ নিক ডানস্টোন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী গত তিন বছরের তাপমাত্রা ‘লা নিনা’ ইফেক্ট দিয়ে প্রভাবিত ছিল৷ এটা এখন শেষ হতে যাচ্ছে।’
‘লা নিনা’ বলতে বোঝায় প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রার শীতল অবস্থা। ‘লা নিনা’-র ফলে মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব নিরক্ষীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। ‘লা নিনা’ অবস্থান করলে ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়। গড় বন্যা স্বাভাবিকের তুলনায় এ সময় বেশি এলাকা প্লাবিত করে।
ধারাবাহিক তিন বছরের এই ‘লা নিনা’ ইফেক্ট এ বছর শেষ হওয়ার কথা৷ ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। ইফেক্ট থাকাকালীন সময়ের তুলনায় এটি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ। আর এ কারণেই ২০২৩ সাল হবে ২০২২ সালের তুলনায় উষ্ণতর।
১৮৫০ সাল থেকে তাপমাত্রার হিসেব রাখা শুরু হয়। সে হিসেবে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল ছিল উষ্ণতম বছর। ২০১৬ সালে ‘এল নিনো’ ইফেক্টের কারণে এত বেশি গরম দেখা দিয়েছিল। ‘এল নিনো’ মানে প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রার উষ্ণ অবস্থা। ঠিক ‘লা নিনা’-র বিপরীত দশা। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অ্যাডাম স্কাইফের মতে, ‘এল নিনো ছাড়া ২০২৩ সাল উষ্ণতম বছর নাও হতে পারে। তবে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের যে গতি, তাতে এ বছরও অন্যতম উষ্ণতর বছর হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ উষ্ণতম বছরের রেকর্ড রাখা শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। তখন থেকে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লবের আগের সময়ের তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
তবে ‘এল নিনো’-র প্রভাব থাকলে তাপমাত্রা আগের সব বছরের রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ যুক্তরাজ্যের রিডিং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ডি টার্নারের মতে, ‘এল নিনো সম্পর্কে জুন মাসে বেশ পরিষ্কারভাবে জানা যাবে।’
তবে কিছুটা ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেমস হ্যানসেন। তাঁর মতে, ‘২০২৪ সালে দেখা যেতে পারে ‘এল নিনো’-র প্রভাব।’
অর্থাৎ, আগামী বছর হতে পারে উষ্ণতম বছর। বড় ধরনের ‘এল নিনো’ প্রভাব দেখা দিলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। যা মারাত্মক জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখোমুখি করবে বিশ্ববাসীকে।
বিশ্বব্যাপী মানুষের গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ ইতিমধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনই কার্বন নিঃসরণ ও গ্রিন হাউজের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হয়ে যথার্থ পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতি ও গরমের মধ্যে থাকতে হবে আমাদের।
লেখক: শিক্ষার্থী, বিজ্ঞান বিভাগ, মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট
সূত্র: যুক্তরাজ্য আবহাওয়া অফিস, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, দ্য ভার্জ