সাইকেল চালানো ভুলি না কেন আমরা?

স্নায়ুবিজ্ঞানীদের ভাষায় এ স্মৃতিকে বলা হয় প্রসিডিউরাল মেমোরি বা পদ্ধতিগত স্মৃতি। মনের অবচেতন অংশে এই স্মৃতি সংরক্ষিত হয়। মানুষের দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিগুলোর মাঝে এটা অন্যতম।

ছোটবেলায় নিজে অথবা কারো সাহায্য নিয়ে হয়তো সাইকেল চালানো শিখেছিলেন। দুরন্ত শৈশবে সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন শত শত কিলোমিটার পথ। জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এখন পরিণত বয়সে এসে পৌঁছেছেন। গত ৫-১০ বছরে হয়তো সাইকেল আর ছুঁয়ে দেখা হয়নি। কোনো কারণে এখন যদি হঠাৎ সাইকেল চালানোর প্রয়োজন পড়ে, পারবেন?

চিন্তার কারণ নেই। নিঃসংকোচে আবার সাইকেলে চড়ে বসতে পারেন। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে যতদিনই পেরিয়ে যাক না কেন, একবার সাইকেল চালাতে শিখলে সারা জীবনে সেটা যখনই প্রয়োজন, তখনই কাজে লাগাতে পারবেন। এজন্য সাইকেল কীভাবে চালাতে হয়, তা মনে করারও প্রয়োজন নেই। মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনাকে সেটা মনে করিয়ে দেবে।

আমাদের অভিজ্ঞতা ও জীবনের ফ্যাক্টগুলো ভিন্ন একধরনের স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষিত হয়। সাইকেল চালাতে পারার বিষয়টি হলো, দক্ষতা। অর্থাৎ, মুভমেন্ট বা চলনের প্যাটার্ন সম্পর্কিত অভিজ্ঞতামূলক স্মৃতি।

স্নায়ুবিজ্ঞানীদের ভাষায় এ স্মৃতিকে বলা হয় প্রসিডিউরাল মেমোরি বা পদ্ধতিগত স্মৃতি। মনের অবচেতন অংশে এই স্মৃতি সংরক্ষিত হয়। মানুষের দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিগুলোর মাঝে এটা অন্যতম। শুধু সাইকেল চালানো নয়, সাঁতার কাটা, গাড়ি চালানো, জুতার ফিতে বাঁধার মতো কাজগুলো শেখার পর তা আমাদের মাসল মেমোরি হিসেবে জমা হয়। মনে এতটাই ভালোভাবে গেঁথে যায় যে পরবর্তীতে কাজগুলো করার সময় আলাদা করে চিন্তার কোনো প্রয়োজন পড়ে না।

কেন মাসল মেমোরি বা পদ্ধতিগত স্মৃতি ভোলা যায় না, সেটা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে এক রহস্য। ধারণা করা হয়, এই স্মৃতিগুলো মস্তিষ্কের এমন এক অংশে সংরক্ষিত, যে অংশটা তড়িৎকর্মা। মানে, বেশ দ্রুত কাজ করে। এজন্য চিন্তাভাবনা ছাড়া, শুধু প্রয়োজন পড়লেই এই স্মৃতিগুলো দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সক্রিয় করে তুলতে পারে।

যেকোনো স্মৃতিকে চাইলে প্রসিডিউরাল মেমোরিতে পরিণত করা যায় না। কোন স্মৃতিটি প্রসিডিউরাল মেমোরিতে পরিণত হবে, এটা মস্তিষ্ক নিজেই ঠিক করে।

দুই ধরনের মাসল মেমোরি আছে আমাদের। এতক্ষণ যে স্মৃতি নিয়ে কথা বললাম, তা একধরনের মাসল মেমোরি। মাসল মেমোরি বলার কারণ, প্রয়োজন হলেই এসব স্মৃতি মস্তিষ্ক সরাসরি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পাঠায়। ফলে এসব কাজ করার সময় আলাদা করে চিন্তা করার প্রয়োজন পড়ে না।

আরেক ধরনের মাসল মেমোরি আক্ষরিক অর্থেই মাসল বা পেশির সঙ্গে সম্পর্কিত। কেউ পেশি বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করলে, মাঝখানে দীর্ঘদিন বিরতি থাকলেও পরবর্তীতে ব্যায়াম করা তাঁর জন্য সহজ হয়। পরিশ্রমও হয় কম। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম করলে পেশি কোষগুলোতে অতিরিক্ত নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়। কিছুদিন ব্যায়াম করে আর না করলেও এসব অতিরিক্ত নিউক্লিয়াস ১৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এদিকে, ব্যায়াম বাদ দিলে পেশি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কিন্তু পেশির মাঝে ব্যায়ামের স্মৃতি বা অতিরিক্ত নিউক্লিয়াস তৈরি হওয়ার স্মৃতি অটুট থাকে। অনেকদিন বিরতির পরে আবার ব্যায়াম করতে চাইলে এসব স্মৃতি পেশি কোষে সক্রিয় হয়, ফলে পরিশ্রমটা অনেক কম হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস