এশিয়ার সবচেয়ে বড় মরুভূমি গোবিতে পাওয়া গেছে নতুন প্রজাতির ডাইনোসরের জীবাশ্ম। বিশাল গোবি মরুভূমি উত্তর চীন থেকে দক্ষিণ মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত বিস্তত। এ মরুর মঙ্গোলিয়া অংশে নতুন এই ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। ডাইনোসরটি থেরিজিনোসর পরিবারের সদস্য। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এরা তৃণভোজী ছিল। এছাড়া এরা ছিল লম্বা নখর বিশিষ্ট দুই পায়ের বিশাল ডাইনোসর। গত ২৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের আইসায়েন্স জার্নালে এ নিয়ে এক গবেষণাপত্রে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
অন্যান্য থেরিজিনোসরদের হাতে তিনটি লম্বা ও ধারালো আঙুল থাকলেও এই নতুন প্রজাতির হাতে রয়েছে শুধু দুটি আঙুল। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এর বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয়েছে ডুওনিকাস সোগটবাতারি (Duonychus tsogtbaatari)। নামটির প্রথম অংশ, অর্থাৎ গণ এসেছে একটি গ্রিক শব্দ থেকে, যার অর্থ জোড়া নখর। আর দ্বিতীয় অংশ, অর্থাৎ প্রজাতির নাম মঙ্গোলীয় জীবাশ্মবিদ খশিগজাভ সোগতবাতারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়েছে।
গবেষকদের ধারণা, প্রায় চার ইঞ্চি ব্যাসের ডালপালা ও অন্যান্য গাছপালা ধরার জন্য এই নখগুলো ব্যবহার করত থেরিজিনোসররা। ৫৭০ পাউন্ড ওজনের এই ডাইনোসরের খাবার জোগাড় করতে এসব নখ সাহায্য করত।
থেরিজিনোসররা ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ দিকে, অর্থাৎ প্রায় ১০ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় বসবাস করত। এরা থেরোপড গোষ্ঠীর ডাইনোসর হলেও টি-রেক্সের মতো মাংস না খেয়ে এরা গাছপালা খেত। অর্থাৎ এগুলো ছিল তৃণভোজী। এসব ডাইনোসর বিশাল, বাঁকানো নখরের জন্য বেশি পরিচিত। এদের কিছু প্রজাতির নখ ২০ ইঞ্চি বা ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতো বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।
কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ এবং এ গবেষণাপত্রের সহলেখক দারলা জেলেনিটস্কি জানান, ‘এখন পর্যন্ত থেরিজিনোসরের অনেক প্রজাতি পাওয়া গেছে। এই প্রজাতির বৈশিষ্ট্য হলো, এদের হাতে তিন আঙুলে বড় বাঁকানো নখর। তবে এই দুই নখের জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়াটা ছিল আশ্চর্যজনক। কারণ, এই প্রজাতির ডাইনোসরদের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য (অর্থাৎ তিন আঙুলের বদলে দুই আঙুল) একেবারেই স্বাভাবিক নয়। এটা আসলেই বিরল এক প্রজাতির জীবাশ্ম।’ আগে পাওয়া থেরিজিনোসরাস (Therizinosaurus) আর বেইপিয়াওসরাস (Beipiaosaurus)-এর মতো অন্য সব থেরিজিনোসরের হাতে তিনটি করে নখ ছিল। তাই ডুওনিকাস সোগটবাতারি নামের এই নতুন ডাইনোসরের দুটি নখ থাকা খুবই অস্বাভাবিক।
জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির জীবাশ্মবিদ এবং গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ইয়োশিতসুগু কোবায়াশি বলেন, ‘থেরিজিনোসরগুলো এমনিতেই খুব অদ্ভুত ও বিরল ডাইনোসর, ডুওনিকাস সোগটবাতারি একে এখন ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।’
থেরিজিনোসররা ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ দিকে, অর্থাৎ প্রায় ১০ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় বসবাস করত। এরা থেরোপড গোষ্ঠীর ডাইনোসর হলেও টি-রেক্সের মতো মাংস না খেয়ে এরা গাছপালা খেত।
দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ার ওমনোগোভি প্রদেশে বায়ানশিরি ফরমেশনে পানির পাইপ বসানোর সময় নতুন এই জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এতে পাওয়া ডাইনোসরের হাতটি বেশ ভালো অবস্থায় ছিল। ডাইনোসরের নখরগুলো কেরাটিন নামে শক্ত পদার্থে ঢাকা হাড় দিয়ে তৈরি, আমাদের নখের মতো।
থেরিজিনোসররা পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে অদ্ভুত ডাইনোসরদের মধ্যে অন্যতম। কালের আবর্তে এরা মাংসাশী থেকে তৃণভোজী হয়ে ওঠে। এদের শরীর ছিল পালকে ঢাকা, পাখির মতো ছোট মাথা ও ঠোঁট ছিল; মুখে ছিল দাঁতের মতো অংশ (কিংবা বলা ভালো, এগুলোর দাঁত ছিল) আর প্রতিটি হাতে ছিল বিশাল নখর। গবেষকদের ধারণা, প্রায় চার ইঞ্চি ব্যাসের ডালপালা ও অন্যান্য গাছপালা ধরার জন্য এই নখগুলো ব্যবহার করত থেরিজিনোসররা। ৫৭০ পাউন্ড ওজনের এই ডাইনোসরের খাবার জোগাড় করতে এসব নখ সাহায্য করত। গঠন অনেকটা স্লথের মতো হলেও এই ডাইনোসরগুলোর কিছু প্রজাতি ছিল ১৩ ফুটের বেশি লম্বা। এগুলোর কোনো কোনোটির ওজন ছিল পাঁচ টনের বেশি।