সাক্ষাৎকার

'বিজ্ঞানী হতে হলে কৌতূহলী হতে হবে'—তাহের সাইফ, অধ্যাপক, বায়োইঞ্জিনিয়ারিং, ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র

তাহের এ সাইফ। প্রবাসী বায়োইঞ্জিনিয়ার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (এনএই) সদস্য নির্বাচিত হন। বিশ্বব্যাপী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্যতম সেরা স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় একে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা করছেন। এর আগে, ২০১৬ সালে বিশেষ ধরনের ন্যানোরোবট (ন্যানোবট) আবিষ্কার করেন তিনি। হৃৎপিণ্ডের কোষ দিয়ে বানানো এ রোবট হয়তো ভবিষ্যতে মানুষের শিরা ও ধমনির মাধ্যমে শরীরে ঢুকে ক্যানসার কোষ খুঁজে খুঁজে ধ্বংস করতে পারবে। এর নাম দেওয়া হয় বায়োবট।

সম্প্রতি এই বিজ্ঞানী দেশে এসেছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সে সময় বিজ্ঞানচিন্তার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। এ সময় তাঁর সাক্ষাৎকার নেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার এবং সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ। ছবি তুলেছেন খালেদ সরকার

বিজ্ঞানচিন্তা:

প্রথমেই জানতে চাই, কেমন আছেন?

তাহের সাইফ: ভালো আছি।

বিজ্ঞানচিন্তা:

দেশে কি অনেক দিন পরে এলেন? কেমন লাগছে এসে?

তাহের সাইফ: না, আমি প্রতিবছরই দেশে আসি। এবারও জানুয়ারিতে এসেছি। বছরে একবার আসা হয়। মাঝেমধ্যে দুবারও আসি। দেশের সবই আমার ভালো লাগে।

'এই কৃতিত্বটা আমার সে সব ছাত্রছাত্রীর, যাঁদের কেউ চার বছর, কেউ ছয় বছর আমার সঙ্গে কাজ করছেন। ফলে মনে হচ্ছে, এই স্বীকৃতিতে নামটা আমার, কিন্তু কৃতিত্বটা তাঁদেরও'—তাহের সাইফ
বিজ্ঞানচিন্তা:

গত বছর আপনি যে ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সদস্য হলেন, এটা একটা বড় স্বীকৃতি। বাংলাদেশের মধ্যে আপনি তৃতীয় জন, যিনি এ রকম একটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন। এ স্বীকৃতি পেয়ে কেমন লেগেছে?

তাহের সাইফ: স্বীকৃতি পাওয়ার পরে খুব ভালো লেগেছে। কারণ, অনেকে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে একে (স্বীকৃতি) দেওয়া যায়। আরও অনেক ভালো কাজ আছে, অনেকে ভালো ভালো কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে আমি এ স্বীকৃতি পেলাম, তাই আমার মনে হয়, আমি ভাগ্যবান। আসলে এই কৃতিত্বটা আমার সে সব ছাত্রছাত্রীর, যাঁদের কেউ চার বছর, কেউ ছয় বছর আমার সঙ্গে কাজ করছেন। ফলে মনে হচ্ছে, এই স্বীকৃতিতে নামটা আমার, কিন্তু কৃতিত্বটা তাঁদেরও।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনি বায়োইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করছেন—ন্যানোটেক ও বায়োবট নিয়ে কাজ করছেন। চিকিৎসায় ন্যানোবটের ব্যাপারটা একটু সহজ করে বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বলুন।

তাহের সাইফ: আমাদের চারপাশে যত মেশিন দেখি, সবই মানুষের তৈরি। তা হোক কম্পিউটার, ইঞ্জিন বা প্লেন। আমরা ভাবছিলাম, মেশিনগুলোকে জীবন্ত কোষ দিয়ে বানানো যায় কি না। তাহলে ওরা নিজেরা নিজেকে তৈরি করতে পারবে। যেমন আমরা তো ভাবতেই পারি না যে একটা যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ, অর্থাৎ নানা যন্ত্রাংশ একটা মাঠে রেখে দিলাম আর সেগুলো নিজে নিজে জুড়ে গিয়ে একটা গাড়ি বা বিমানে পরিণত হয়ে গেল। এটা সায়েন্স ফিকশনে হয়, বাস্তবে মনে হয় অকল্পনীয়। কিন্তু লিভিং সেল (জীবিত কোষ) যদি থাকে—কারণ ওগুলো তো জীবন্ত, ওদের নিজস্ব গতি আছে—তাহলে ওরা নিজেরাই একটা মেশিন তৈরি করতে পারে কি না, সেটাই দেখতে চাচ্ছিলাম আমরা। বুঝতে চাচ্ছিলাম, মেশিনটা কত কমপ্লেক্স (জটিল ধরনের) হতে পারে। এটাই ছিল প্রথম আইডিয়া যে মেশিনটা বানানো সম্ভব কি না। আমি কতগুলো সেল (কোষ) দিলাম এবং সেগুলো একসঙ্গে কাজ করতে করতে একটা মেশিন হয়ে গেল। আমার কাজ ছিল, যন্ত্রটা সাঁতার দিতে পারে কি না এবং চিন্তা করার ক্ষমতা আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা। আসলে যন্ত্রটা বুঝতে পারে কি না যে গতকাল কী ছিল আর আজ কী হচ্ছে। সেটা বোঝার জন্য আমরা ওতে নিউরন দিলাম। তখনই এই সম্ভাবনা চলে এল। কারণ, নিউরন নিজে নিজে শিখতে পারে, ভুল শুধরে নিজেদের ঠিক করে নিতে পারে। এতে দুটি সুবিধা। এক. নিজেরাই নিজেদের তৈরি করতে পারে। দুই. নিজেরা নিজেদের সুস্থ করতে পারে প্রয়োজনে। আবার নিজেরা বুঝতে পারে যে কোন দিকে যেতে হবে। নিজেরা চিন্তা করতে পারে। একটা উড়োজাহাজ কিন্তু এটা করতে পারবে না।

আমরা গত ১২ বছরে দেখিয়েছি, এগুলো সম্ভব। এরপর আমরা সাত বছরের একটা প্রজেক্ট শুরু করলাম। বুঝতে চাইছিলাম যে ওরা কতটা জানে। এটা কি সম্ভব যে ভবিষ্যতে ওরা নিজেরা সতর্ক থাকবে? এটার ভবিষ্যৎ অ্যাপ্লিকেশন (ব্যবহার) কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। প্রচলিত আছে, যখন প্রথম চুম্বক আবিষ্কৃত হলো, তখন গবেষকেরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এটার কাজ কী? তখন আবিষ্কারক বলেছিলেন, একটা বাচ্চা জন্ম নিলেই কিন্তু আমরা জিজ্ঞাসা করি না, এর কাজ কী? আমরা আশা করি সে একদিন বড় হবে। আমাদের অবস্থাও অনেকটা সে রকম। আমাদের বট এখনো শৈশব অবস্থায় আছে। ভবিষ্যতে হয়তো এটা হতে পারে যে শরীরের কোথাও ক্যানসার হলে ওরা নিজেরা ধরে ফেলতে পারবে যে এখানে ক্যানসার কোষ আছে। হয়তো ওরা নিজেরাই একটা ওষুধ তৈরি করবে, যা ওই ব্যক্তির জন্য দরকারি। বর্তমানে তো ক্যানসারের ওষুধ বানানো হয় কারখানায়। কিন্তু একদিন হয়তো এ ধরনের ন্যানোবট শরীরের ভেতরেই ওষুধ বানিয়ে ফেলবে। কারণ, আমাদের প্রতিটি কোষ কিন্তু প্রতিদিন ১০ হাজার প্রোটিন তৈরি করে দরকার অনুযায়ী। হয়তো ভবিষ্যতে এ ধরনের ন্যানোবট কোষে গিয়ে নিজেরাই বুঝবে, এখন কোন ওষুধটা দরকার। সে অনুযায়ী সে ওষুধ তৈরি করে রোগ সারাবে। তখন হয়তো ২০ থেকে ৫০ বছর পর আমাদের আর ওষুধ খেতে হবে না।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনারা এটা মানুষের উপকারের কথা ভেবে বানিয়েছেন। কিন্তু কেউ যদি এটা খারাপভাবে ব্যবহার করতে চায়, সে ক্ষেত্রে তা থামানোর কোনো উপায় আছে?

তাহের সাইফ: হ্যাঁ, একটা উপায় হলো সুইচ অফ করে দেওয়া। তা ছাড়া আমরা ভাবছি, এগুলো চার দিনের বেশি বাঁচতে পারবে না। নির্দিষ্ট সময় পর এমনিতেই মারা যাবে। তবু কেউ চাইলে হয়তো এটা খারাপভাবে বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আমরা সেখান থেকে এখনো অনেক দূরে রয়েছি। সময় হলে হয়তো সে রকম ব্যবস্থাও গড়ে উঠবে, যেন এর নেতিবাচক ব্যবহার থামানো যায়।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আমরা যে এত অস্ত্র বানাচ্ছি, সায়েন্স ফিকশনে দেখানো হয়—বিভিন্ন সভ্যতা এসবের জন্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাস্তবে কি এমন হওয়া সম্ভব? আমাদের বিভিন্ন ল্যাবে কি সে রকম অস্ত্র আছে?

তাহের সাইফ: কোভিড কিন্তু অনেক দিন আমাদের ভুগিয়েছে। অনেকের ধারণা, এটা একটা ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এটা প্রমাণিত নয়। তবে আমরা জানি, অনেক ল্যাবরেটরিতে বায়োউইপেন (জৈবাস্ত্র) আছে। এটা অবশ্য কেউ ঘোষণা করে না যে অনেক দেশের কাছে এই বায়োউইপেন আছে, চাইলেই ছেড়ে দিতে পারবে। কিন্তু বিভিন্ন ল্যাবে এ ধরনের অস্ত্র বা ভাইরাস রয়েছে। এটা আসলেই সম্ভব। তবে বিজ্ঞানীরা এসব ভাইরাসের প্রতিষেধক বানাচ্ছেন, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থাও আছে এ জন্য। আসলে ভালো-মন্দের বিষয়টা নির্ভর করে মানুষের ওপর। মানুষ যত দিন ভালো থাকবে, এথিকস (নৈতিকতা) মানবে, তত দিন আমাদের এমন কিছুর মুখে পড়তে হবে না।

নিজ গবেষণাগারে অধ্যাপক তাহের সাইফ
বিজ্ঞানচিন্তা:

বর্তমানে অমরত্ব নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। অ্যামাজনের জেফ বেজোস এতে বিনিয়োগ করছেন বলেও খবরে এসেছে। আপনি কি মনে করেন, প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে?

তাহের সাইফ: ২০ বা ৩০ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর এক্সপেকটেশন (প্রত্যাশা) ছিল ৪০ বা ৪২ বছর। এখন সেটা ৭২ হয়েছে। কাজেই (আয়ু) এমনিতেই বেড়ে যাচ্ছে। আর এটা দিন দিন বাড়ছেই। কারণ, এখন আমাদের কলেরার ওষুধ আছে। নানা রোগের নানা ওষুধ আছে। ফলে আয়ু বাড়ছে। কিন্তু ৫০ বছরের পরে আমাদের ব্রেন (মস্তিষ্ক) আর আগের মতো কাজ করতে পারে না। সেটা কিন্তু আমরা বন্ধ করতে পারিনি। আমরা ইনফেকশন বন্ধ করতে পারলেও মস্তিষ্কের বয়স বাড়া ঠেকাতে পারছি না। আমরা বেশি দিন বাঁচলে নানা ধরনের সমস্যা হয়। ডিপ্রেশন হয়, কিছু ভালো লাগে না। বৃদ্ধ বয়সে ছেলেমেয়েরা কাছে থাকে না। সব মিলিয়ে একটা খারাপ অবস্থা তৈরি হয়।

হয়তো ভবিষ্যতে আমরা আরও বেশি বাঁচব। কিন্তু আমাদের বুড়িয়ে যাওয়া কমবে না। আগে একান্নবর্তী পরিবার বেশি ছিল, সাপোর্ট (সবার সহায়তা) পাওয়া যেত। এখন সে ধরনের পরিবার দিন দিন কমছে। আসলে একটা বয়সের পরে মানুষের জীবনে আর কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে না।

বিজ্ঞানচিন্তা:

ক্যানসার চিকিৎসায় আপনার আবিষ্কৃত বায়োবট ভূমিকা রাখতে পারে বলেছেন। এটা কি ট্রায়াল পর্যন্ত আসতে পেরেছে?

তাহের সাইফ: না না, সে জন্য আরও অন্তত ৪০ বছর লাগবে। আমার জীবনে হয়তো দেখে যাওয়ার সুযোগ হবে না। আর ওটা বাজারে চলে এলে তো সব ওষুধ পরিবর্তন হয়ে যাবে, তাই শুধু ট্রায়াল নয়, আরও অনেক বিষয় আছে এতে।

বিজ্ঞানচিন্তা:

এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণার কথা শোনা যাচ্ছে। আপনি কী মনে করেন? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাবে?

তাহের সাইফ: এখন চ্যাটজিপিটি খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রযুক্তির সব সময় পজিটিভ (ভালো) কিছু দিক থাকে। আমি ক্লাসে পড়াতে গেলে দেখি, চ্যাটজিপিটিতেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। আর আগামী কয়েক বছরে এর তথ্যভান্ডার আরও উন্নত হবে। এ জন্য আমি মাঝেমধ্যে ভাবি, প্রতিবছর ছেলেমেয়েরা ৬০, ৭০ হাজার ডলার খরচ করে পড়ালেখা করে, এটার দরকার কী? চ্যাটজিপিটি তো ফ্রি পাচ্ছে। কারণ, ওরা তো আমাদের কাছে আসেই ওই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য। আর আমরা তো একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব, কিন্তু চ্যাটজিপিটি সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। ওই চিন্তা করলে হয়তো পাঁচ বছর পরে আর আমাদের (পড়াশোনা বা শিক্ষকের) দরকারই হবে না। অনেক চাকরিতেই মানুষের দরকার হবে না। এআই হয়তো ধীরে ধীরে আরেকটা প্রজাতি হয়ে যাচ্ছে। আপনি চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথা বললে মনে হবে, এটা আপনার বন্ধু। কারণ, ও আপনাকে চিনে ফেলেছে।

এদিকে আমরা এখন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। ওদিকে কম্পিউটারকে যত প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, যত ডেটা দেওয়া যায়, ততই সেটা একটা পারসোনালিটি (ব্যক্তিত্ব) পেয়ে যায়। একটা ইউনিক পারসোনালিটি। এটাকে আসলে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যাবে, আবার মন্দ কাজেও লাগানো যাবে। হয়তো একজন ছাত্র কিছু না পড়ে ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে গেল। এটা ঠিক নয়। কিন্তু একটা ভালো ছাত্র যদি কঠিন সমস্যায় আটকে যায়, সে হয়তো কম্পিউটারের সাহায্যে সমাধান করতে পারবে সেটার। এটা একদিক থেকে ভালো। আবার অনেক চিন্তাবিদের মতে, এটা ভয়ানক। কারণ, সে আসলে চিন্তা করছে না। চিন্তা করার অভ্যাস ছেড়ে দিচ্ছে। একটা প্রজন্ম বেড়েই উঠছে এভাবে। যা–ই হোক, আগে তো কেউ স্মার্টফোনের কথাও চিন্তা করতে পারত না। একসময় সেটা চলে এসেছে। এটা বা এআইয়ের উন্নতিতে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। এটা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। অর্থাৎ আমরা চাইলেও বাধা দিতে পারব না। প্রযুক্তি নিজের মতো এগোবেই। একসময় হয়তো দেখব, এআই অনেক দূর চলে গেছে। এটা ব্যবহার না করলেও আপনি পিছিয়ে যাবেন।

বিজ্ঞানচিন্তা:

অনেক সায়েন্স ফিকশনে দেখানো হয়, রোবটরা আধিপত্য বিস্তার করে পৃথিবী দখল করে নিয়েছে। আপনার কী মনে হয়, রোবট বা এআই কখনো পৃথিবী দখল করতে পারবে?

তাহের সাইফ: এটা বলা মুশকিল। কারণ, এআই এখন অনেক কিছু করছে, এটা তো কেবল দুই বছরের ঘটনা। ভবিষ্যতে এআই আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, তা আগে থেকে অনুমান করা মুশকিল। এখনই এআই আমাদের মনিটর করতে পারে। আমাদের পছন্দ, অপছন্দ জেনে গাইড করতে পারে। আগে মানুষ যখন যাযাবর ছিল, তখন তাদের স্থায়ী বসতি ছিল না। তারপর যখন মানুষ ফসল ফলানো শিখল, তখন কিন্তু সে আর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত না, স্থায়ী হয়ে গেল। এভাবে একটা মহল্লা, সেখান থেকে শহর, দেশ গঠিত হলো। কারণ, এসব ফেলে মানুষ যাবে কোথায়? এর ফলে দেখা যাচ্ছে, মানুষ কিন্তু শুধু শস্যকে পরিবর্তন করেনি, শস্যই ওকে পরিবর্তন করেছে। এ কারণে এআই আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাবে, তা বলা মুশকিল।

তবে আমি আবারও জোর দিয়ে বলব, এআইকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মানুষ, ডেটা দিচ্ছে মানুষ। মানুষের নৈতিক বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে এ ধরনের বিপদ এড়ানো যাবে অনেকাংশেই। সে জন্য আমরাও আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা নিয়ে কোর্স করাই। আমি আসার আগেও একটা কোর্স করিয়েছি। এই দিকটা, নৈতিকতার ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনার মাধ্যমিক পড়ালেখা তো চট্টগ্রামে। তারপর সেখান থেকে ঢাকায় চলে এলেন। সে সময়ের কথা শুনতে চাই।

তাহের সাইফ: আব্বা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। ফলে আমরা বিভিন্ন শহরে থেকেছি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহীতে ছিলাম। যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে ছিলাম। তখন রিফিউজি হয়ে গেলাম। চট্টগ্রামের একটা শহর (উপজেলা) ছিল পটিয়া নামে। ওখানেও ছিলাম। চট্টগ্রামের অনেক পরে পাকিস্তানিরা পটিয়ায় যায় এবং ভারী এয়ার বোমা নিক্ষেপ করে। তখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি। অনেক মানুষ তাতে মারা যান। আমাদের আশপাশের অনেকে মারা গেছেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে আমার পরিবারের কেউ মারা যাননি সেই বোমা হামলায়। গ্রামে যখন বোমা মারা হচ্ছে, আমরা তখন বাজারে। বাসে উঠব, এ রকম অবস্থা। তখনই বোমা মারা শুরু হলো। বাস কিছুটা এগিয়ে থেমে যায়। চারদিকে আগুন, চিৎকার। ভয়াবহ অবস্থা।

এরপর চট্টগ্রামে এসে ম্যাট্রিক পাস করে তারপর ঢাকায় যাই। ওই বীভৎস স্মৃতি অনেক দিন আমার মাথায় রয়ে গেছে। প্রায় ২৫ বছর আমি ঘুমাতে পারিনি। দুঃস্বপ্ন দেখতাম। একই স্বপ্ন বারবার দেখতাম। এই স্মৃতি আমাকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়।

'আসলে স্বপ্ন তো ছিল ডাক্তার হব, রোগীর সেবা করব। অনেকটা করছিও তা–ই। কিন্তু ডাক্তারদের থেকে আমার দূরত্ব অনেক বেশি'—তাহের সাইফ
বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনার বুয়েটে পড়ার অভিজ্ঞতা, সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলুন।

তাহের সাইফ: বুয়েট তখনো খুব স্ট্রিক্ট ছিল। এদিক-সেদিক কিছু করা যেত না। আমি বুয়েট পাস করার পর আব্বার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর দুই বছর ছিলাম দেশে। তারপর চলে যাওয়ার চিন্তা করি। উচ্চশিক্ষা নিতে হবে, এটা মাথায় ছিল সব সময়।

বিজ্ঞানচিন্তা:

নতুন দেশে পড়ালেখার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

তাহের সাইফ: খুব কঠিন। ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম গিয়ে। তখন টেলিফোন করতে মিনিটে আড়াই ডলার লাগত। দেশে আবার মায়ের ফোন ছিল না। পুরো মহল্লায় ফোন ছিল মাত্র একটা। তাঁদের ফোন করলে তাঁরা মাকে দিতেন। এ জন্য চাইলেই ফোন করা যেত না। স্বপ্ন দেখতাম, একদিন প্রযুক্তি এগিয়ে যাবে আর আমরা কথা বলার পাশাপাশি ছবিও দেখতে পারব। সেটা এখন বাস্তব হয়েছে।

তখন আমরা গিয়ে ভালো ইউনিভার্সিটি খোঁজার পরিবর্তে কোথায় বাঙালি আছে, তা খুঁজতাম। কয়েকজন সিনিয়র ভাই ছিলেন ওখানে। তারপর সেখানে কিছুদিন থেকে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে চলে যাই। সেখানে পিএইচডি করতে গিয়েছিলাম আমি।

তবে আমি আবারও জোর দিয়ে বলব, এআইকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মানুষ, ডেটা দিচ্ছে মানুষ। মানুষের নৈতিক বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে এ ধরনের বিপদ এড়ানো যাবে অনেকাংশেই
বিজ্ঞানচিন্তা:

শৈশবে কী হতে চেয়েছিলেন?

তাহের সাইফ: ডাক্তার। একবাক্যে ডাক্তার হতে চাইতাম। আমি ভর্তি পরীক্ষার সময় ঢাকা মেডিকেলের ফর্ম নিতে গিয়ে দেখলাম, চারদিকের দেয়ালে পলিটিক্যাল লেখা। ওদিকে আমার কিছু বন্ধু বুয়েটে ফর্ম নেবে। আমিও গেলাম ওদের সঙ্গে। সেখানে গিয়ে দেখি, জায়গাটা একদম নিরিবিলি। কোনো লেখা নেই দেয়ালে। সেটা আমার ভালো লাগে। বন্ধুরা ফর্ম নিতে বললে নিয়ে নিলাম। পরে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়ে গেলাম।

বিজ্ঞানচিন্তা:

ডাক্তার হওয়ার চেয়ে কি গবেষণা করা বেশি ভালো মনে হয় এখন?

তাহের সাইফ: আসলে স্বপ্ন তো ছিল ডাক্তার হব, রোগীর সেবা করব। অনেকটা করছিও তা–ই। কিন্তু ডাক্তারদের থেকে আমার দূরত্ব অনেক বেশি। সরাসরি রোগীদের চিকিৎসা করতে পারছি না। আবার ডাক্তারি পড়তে না পারার আক্ষেপ থেকেও এদিকে আসার কিছুটা অবদান আছে। কারণ, আব্বা মারা যাওয়ার সময় তাঁকে ক্যানসারে কষ্ট পেতে দেখেছি। তাই আমি চাইতাম ডাক্তার হয়ে মানুষের কষ্ট কমাব। সে জন্যই হয়তো ডাক্তার হতে চাইতাম। এখনো কেউ মেডিকেল সমস্যা নিয়ে এলে আমি ঝাঁপিয়ে পড়ি। ভেতরের সেই ইচ্ছাটা এখনো রয়ে গেছে।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বিজ্ঞানের চূড়ান্ত গন্তব্য কী বলে মনে হয়?

তাহের সাইফ: এটা একেক বিজ্ঞানীর কাছে একেক রকম। বিজ্ঞান এখন অনেক দূর চলে এসেছে। তবে আমার মনে হয়, বিজ্ঞান মানুষের জন্য বড় কিছু করতে পারলে সেটাই তার সাফল্য, যেন কম খরচে চিকিৎসা অনেকের কাছে পৌঁছাতে পারে।

আমাদের গবেষণার বিষয় অনেক, ইচ্ছাও আছে, কিন্তু সামর্থ্য কম। আর বিজ্ঞানে (গবেষণায়) ইনভেস্টমেন্টে (বিনিয়োগে) লস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমন না যে আপনি দুই টাকা দিয়ে কিছু কিনে তিন টাকা বিক্রি করতেই পারবেন। পুরাটাও লস হতে পারে। যা বানাতে চান, তা সফল না হলেই কিন্তু সম্পূর্ণটা লস। কিন্তু একটা ব্যাপার আছে এখানে। হয়তো অনেকবার ২ টাকা খরচ করলে একবার ২০০ টাকা পাওয়া যাবে। এর ফলে চেষ্টা করতে হবে।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চা বা গবেষণা এগিয়ে নিতে চাইলে কী করা উচিত?

তাহের সাইফ: লিডারদের ওপর নির্ভর করে ব্যাপারটা। আমাদের ভাবতে হবে, আগামী ৫০ বছরে আমরা কী করতে চাই। দেশকে কোথায় দেখতে চাই। সে অনুযায়ী গবেষণা করতে হবে। তাহলেই গবেষণা ও দেশ—দুটোই এগোবে।

বিজ্ঞানচিন্তা:

একজন বিজ্ঞানী বা গবেষক হিসেবে কোন ব্যাপারটা আপনাকে বেশি অনুপ্রাণিত করে?

তাহের সাইফ: ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, মানুষের উপকার করার বিষয়টা। যা করলে মানুষের উপকার হবে, আমি সেটাই করতে চাই। সেটা যত ছোটই হোক, সেটাই করতে চাই আমি। আর আমার গবেষণায় মানুষ উপকৃত হবে, এটাই আমাকে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগায়।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনি কাদের বই বেশি পড়েন?

তাহের সাইফ: নন-ফিকশন বেশি পড়া হয়। তবে ছোটগল্পও পড়ি। প্রতিদিন ঘুমের আগে কিছু না কিছু পড়া হয়।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বাংলাদেশি লেখকদের মধ্যে কার বই পড়েন?

তাহের সাইফ: রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ূন আহমেদ পড়েছি। আনিসুল হকের মা অনেক বড় কাজ। আমার মাকে হারানোর পর আরও বেশি বুঝতে পারি। পাশাপাশি নানা নতুন ধরনের গল্প-প্রবন্ধও পড়ি।

বিজ্ঞানচিন্তা:

এমন কোনো বইয়ের নাম বলবেন, যা সবার পড়া উচিত?

তাহের সাইফ: রশিদ খালিদির দ্য হানড্রেড ইয়ার’স ওয়ার অন প্যালেস্টাইন বইটা সবাইকে পড়তে বলব। ইতিহাস জানার জন্য এ ধরনের বই পড়া খুব দরকার।

বিজ্ঞানচিন্তা:

শৈশবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে, এমন কোনো বই আছে?

তাহের সাইফ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত আমাকে অনেক প্রভাবিত করেছিল।

বিজ্ঞানচিন্তা:

অবসরে বই পড়া ছাড়া আর কী করেন?

তাহের সাইফ: পরিবারকে সময় দিই। মাঝেমধ্যে ঘুরতে যাই।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনি অনেক বছর ধরে বিদেশে। সেখানে যে কাজ করছেন, তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ—দুইভাবেই আমাদের কাজে লাগছে। তবু জানতে চাই, আপনার কি ভবিষ্যতে দেশে ফেরার পরিকল্পনা আছে?

তাহের সাইফ: দেশকে আমি খুব মিস করি। সে জন্যই প্রতিবছর এসে ঘুরে যাই। কিন্তু একেবারে হয়তো দেশে আসা হবে না। এখনকার যুগে আমি কোন দেশের নাগরিক, তার চেয়ে কী করছি, সেটাই আমার মনে হয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞানচিন্তা:

সে ক্ষেত্রে বিদেশে থেকেই দেশে কোনো গবেষণা বা আর কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি?

তাহের সাইফ: হ্যাঁ, আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কাজ করছি অনেক বছর। বুয়েটেও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টকে অনেক সময় পরামর্শ দিয়েছি, বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্টের কথা বলেছি। বেশির ভাগই কেনা হয়েছে। আমি চাই দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাক। দেখি, কতটা কী করা যায়।

সবচেয়ে বেশি দরকার স্কুলের বাচ্চাদের বিজ্ঞানের দিকে নিয়ে আসা। বিজ্ঞান নিয়ে যত বেশি আলোচনা হবে, শিশুরা বিজ্ঞানের প্রতি তত আগ্রহী হবে। বিজ্ঞানীদের জীবনী পড়ানো উচিত শিশুদের। কারণ, ওরা খুব কৌতূহলী থাকে
বিজ্ঞানচিন্তা:

আমাদের দেশে বিজ্ঞান জনপ্রিয় করার জন্য আরও কী করা যেতে পারে?

তাহের সাইফ: সবচেয়ে বেশি দরকার স্কুলের বাচ্চাদের বিজ্ঞানের দিকে নিয়ে আসা। বিজ্ঞান নিয়ে যত বেশি আলোচনা হবে, শিশুরা বিজ্ঞানের প্রতি তত আগ্রহী হবে। বিজ্ঞানীদের জীবনী পড়ানো উচিত শিশুদের। কারণ, ওরা খুব কৌতূহলী থাকে। ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। এই বয়সেই তাদের যদি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে বিজ্ঞানের প্রতি শিশুরা আগ্রহী হবে। এখন মনে হয়, শিশুদের মুঠোফোনের দিকে বেশি ঝোঁক। এটা বইয়ের দিকে নিয়ে এলে, পড়ার দিকে নিয়ে এলে সেটা দেশের জন্য ভালো হবে।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনি বিজ্ঞানী বা ডাক্তার না হলে কী হতেন?

তাহের সাইফ: সম্ভবত লেখক। লেখালেখি না করলেও যাঁরা শক্তিমান লেখক, তাঁদের লেখা খুব ভালো লাগে। মানুষের মনের ওপর তাঁদের খুব প্রভাব। এটা আমাকে বিস্মিত করে।

একনজরে

জন্ম: ১৯৬১ সাল, পুরান ঢাকা

বাবা: সাইফুর রহমান

মা: তাহেরা বেগম

সন্তান: ১ ছেলে, ১ মেয়ে

স্ত্রী: শাহনীলা চৌধুরী

অবসর: বই পড়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো

প্রিয় বই: শ্রীকান্ত

প্রিয় লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ, আনিসুল হক

গান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রং: নীল (অ্যাকুয়া)

বিজ্ঞানচিন্তা:

ছাপা বই পছন্দ করেন, নাকি ডিজিটাল?

তাহের সাইফ: ছাপা বই। আমি ডিজিটালে নেই।

আমরা অনেক সময় মা–বাবা বা সমাজের চাপে পড়ার বিষয় বেছে নিই। কিন্তু আমার মনে হয়, সেটা না করে নিজের পছন্দমতো কাজ করা উচিত। জীবনকে উপভোগ করা উচিত। কারও আর্টিস্ট হতে হলে সে তা–ই হবে
বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনার কি মনে হয়, ছাপা বই একসময় হারিয়ে যাবে?

তাহের সাইফ: অবশ্যই হারিয়ে যাবে। তবে বই থাকবে, ডিজিটাল হোক বা যে ফর্মেই হোক, জ্ঞানটা থাকবে বলে আমি মনে করি।

বিজ্ঞানচিন্তা:

নতুন গবেষকদের অনেকেই অনার্স শেষ করে হয়তো বিদেশে যেতে চান। তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

তাহের সাইফ: আমরা অনেক সময় মা–বাবা বা সমাজের চাপে পড়ার বিষয় বেছে নিই। কিন্তু আমার মনে হয়, সেটা না করে নিজের পছন্দমতো কাজ করা উচিত। জীবনকে উপভোগ করা উচিত। কারও আর্টিস্ট হতে হলে সে তা–ই হবে। বাবা বলেছেন ডাক্তার হলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে, তাই ডাক্তার হতে হবে, এমন করা উচিত নয়। নিজের পছন্দেরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

বিজ্ঞানচিন্তা:

কেউ আপনার সঙ্গে গবেষণা করতে চাইলে তাকে কী করতে হবে?

তাহের সাইফ: বেসিক জিনিসগুলো জানতে হবে। জীববিজ্ঞান, ডিজাইন, মেকানিকস ইত্যাদি জানতে হবে। তারপর পদ্ধতিগতভাবে এগোতে হবে। আমি হই বা যেকোনো গবেষক, পদ্ধতিগতভাবে বেসিক জিনিসগুলো জেনে এগোলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করা সম্ভব।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বিজ্ঞানচিন্তার বেশির ভাগ পাঠক কিশোর ও তরুণ। ওদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

তাহের সাইফ: কৌতূহল বাড়াতে হবে। মা–বাবার কাজ হবে বাচ্চাদের কৌতূহলী করা। বিজ্ঞানের ভিত্তিমূল হলো কৌতূহল। এটা হারিয়ে ফেললে বিজ্ঞান পড়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞান মানে এমন একটা জায়গায় যাওয়া, যেখানে এখনো মানুষ যায়নি। জানা থাকলে তো আর বিজ্ঞান হলো না। সুতরাং নতুন বিষয় জানতে হবে। সে জন্য হতে হবে কৌতূহলী। কৌতূহল থাকলে বিজ্ঞান খুব ইন্টারেস্টিং। ওটা না থাকলে বিজ্ঞান হবে শুধু কিছু রুল (নিয়মকানুন)। তাই বিজ্ঞানী হতে হলে কৌতূহলী হতে হবে।

অনুলিখন: অনিক রায়

*সাক্ষাৎকারটি বিজ্ঞানচিন্তার জুন ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত