দুঃসংবাদ শুনলে কি শরীর খারাপ করে

বিজ্ঞান বলছে, দুঃসংবাদ শুনলে কারো কারো শরীর খারাপ করতে পারেছবি: সংগৃহীত
কোনো দুঃসংবাদ পেলে ভয়ের মতো একইভাবে আমাদের দেহ প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই প্রতিক্রিয়াকে বলে ‘ফাইট অর ফ্লাইট’। বাংলা করলে হতে পারে—‘লড়ো বা পালাও’। অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ মোকাবেলার জন্যই দেহের এমন প্রতিক্রিয়া

ভয় পেলে অনেকের পিলে চমকে যায়। নিছক সাহিত্যের অলঙ্কারে মোড়া বাক্যের মতো শোনালেও কথাটি বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য। বাংলায় প্লীহা অঙ্গটারই আরেক নাম পিলে। পেটের বাঁ পাশে ওপরের দিকের একটি অঙ্গ এটি। শরীরের লসিকাতন্ত্রে ও রক্ত সংবহনতন্ত্রে অঙ্গটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজিতে এর নাম স্প্লিন। ভয় পেলে আমাদের দেহ একধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে পাকস্থলী ও এর আশপাশের অঞ্চলে এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমনটা বলেছি, প্লীহার অবস্থান এখানেই। যাহোক, কথা হলো, দুঃসংবাদের ক্ষেত্রেও কি তাই ঘটে? মানে দুঃসংবাদ পেলেও কি মানুষের শরীর খারাপ হতে পারে?

বিজ্ঞান বলছে, হ্যাঁ, পারে। সবার জন্য না হলেও অন্তত কারও কারও জন্য কথাটা সত্য। কোনো দুঃসংবাদ পেলে ভয়ের মতো একইভাবে আমাদের দেহ প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই প্রতিক্রিয়াকে বলে ‘ফাইট অর ফ্লাইট’। বাংলা করলে হতে পারে—‘লড়ো বা পালাও’। অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ মোকাবেলার জন্যই দেহের এমন প্রতিক্রিয়া।

কীভাবে এ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, তা গবেষণা করে বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মস্তিষ্ক দুঃসংবাদ শুনলে নিজেকে অনিরাপদ ভাবতে শুরু করে। ফলে আত্মরক্ষার্থে নেমে পড়ে কাজে। সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের সাহায্যে মস্তিষ্ক আমাদের মেরুদণ্ড, হৃৎপিণ্ড, অন্ত্রসহ দেহের প্রধান অঙ্গগুলোতে বার্তা পাঠায়। বিপদে লড়াই অথবা পালানোর জন্য প্রস্তুত করে দেহকে।

লড়াই বা পালানোর প্রতিক্রিয়ার শুরুটা হয় হজম প্রক্রিয়া বন্ধের মাধ্যমে। ফলে দেহের রক্তপ্রবাহ এবং শক্তি আরও বেশি পরিমাণে স্থানাস্তরিত হয় পেশিতে। হঠাৎ হজম বন্ধ হওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকে অসুস্থ বোধ করেন। মানুষ ভেদে এর প্রভাবে বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। সহজ কথায়, দুঃসংবাদ শুনলে আমাদের মধ্যে অনেকেই অবচেতনে একধরনের হুমকি অনুভব করি। বা ভয় পাই। ফলে শরীর নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখায়।

বিজ্ঞানীদের মতে, অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মস্তিষ্ক দুঃসংবাদ শুনলে নিজেকে অনিরাপদ ভাবতে শুরু করে

সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের বিপরীত কাজ করে প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র। স্বাভাবিক বা আরামদায়ক অবস্থায় এ স্নায়ুতন্ত্র বেশি সক্রিয় থাকে। দেহকে ভিন্ন বার্তা পাঠায়। এ সময় হজম প্রক্রিয়া সুন্দরভাবে চলে। দুঃসংবাদ শুনে যেসব শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়, তা কাটাতে চাইলে প্রয়োজন সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুর সক্রিয়তা কমানো। এক্ষেত্রে সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুর সক্রিয়তা কমাতে চাইলে বাড়াতে হবে প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুর সক্রিয়তা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয় বা দুঃসংবাদে শরীর খারাপ করছে, এ অবস্থায় বড় বড় শ্বাস নেওয়া যেতে পারে। নিজেকে শান্ত করার বেশ কার্যকর পদ্ধতি এটি

কিন্তু প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুর সক্রিয়তা চাইলেই তো আর বাড়ানো যায় না। সে জন্য কিছু না কিছু করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয় বা দুঃসংবাদে শরীর খারাপ করছে, এ অবস্থায় বড় বড় শ্বাস নেওয়া যেতে পারে। নিজেকে শান্ত করার বেশ কার্যকর পদ্ধতি এটি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চাইলেও খুব সহজে আত্মনিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অনেক সময় ধরে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হয়। এজন্য কোন ধরনের দুঃসংবাদ শুনলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বা নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং কোন পরিস্থিতিতে অসুস্থ হলেও নিয়ন্ত্রণ হারান না—তার একটি তালিকা তৈরি করতে পারেন। যেসব পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেগুলোকেই আরও স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যায়াম, যোগব্যায়ামের মতো মনোদৈহিক চর্চা দুঃসংবাদ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার মতো মানসিক শক্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

দুঃসংবাদ শুনলে যদি কারও শরীর নিয়মিত খারাপ হয় বা বেশিরভাগ সময়ই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। মানসিক এরকম সমস্যাগুলোকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস

আরও পড়ুন