পৃথিবীতে বিচিত্র সব প্রাণীর সমাহার। স্থলভাগের প্রাণী সম্পর্কে যতটা জানা যায়, জলভাগের প্রাণী সম্পর্কে ততটাই অজানা। আমাদের পরিচিত এমন অনেক প্রাণী আছে যেগুলো সম্পর্কে জানলে আরও কৌতূহল বাড়ে। সমুদ্রের এমনই এক প্রাণী অক্টোপাস। মলাস্কা পর্বের এই অতিপরিচিত প্রাণীটি শত্রুর চোখে ধুলো দিতে ওস্তাদ। আট পা ছাড়াও এদের আরও কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, এদের রক্তের রং নীল এবং এদের হৃৎপিণ্ড তিনটি! তবে আজ শুধু এদের নীল রক্তের রহস্য জানব।
অক্টোপাসের রক্তের রং নীল হওয়ার কারণ হিমোসায়ানিন নামে একটি রঞ্জক পদার্থ। এই রঞ্জক পদার্থ অক্টোপাসের শরীরে অক্সিজেন বহন করে। হিমোসায়ানিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এতে থাকা তামার পরমাণুগুলো অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে Cu²⁺ (কপার আয়ন) তৈরি করে। এই বিক্রিয়ার ফলে হিমোসায়ানিন নীল রং ধারণ করে। অনেকটা আমাদের রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিনের মতো, যা লোহা (Fe) ও অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লাল রং ধারণ করে। এখানে মূল পার্থক্য হলো, হিমোসায়ানিন তামা ব্যবহার করে, আর হিমোগ্লোবিন ব্যবহার করে লোহা।
ঠান্ডা পানি ও কম অক্সিজেনযুক্ত পরিবেশে হিমোসায়ানিন হিমোগ্লোবিনের চেয়ে বেশি কার্যকর।
ভাবতে পারেন, অক্টোপাসের রক্তে হিমোসায়ানিনের পরিবর্তে হিমোগ্লোবিন থাকলে কী হতো? কেন ওদের রক্তে হিমোগ্লোবিন নেই? এতে অবশ্য একটা সমস্যা হতো। অক্টোপাসকে সমুদ্রের ওপরিভাগে তেমন ভেসে বেড়াতে দেখা যায় না। আট পায়ের সাহায্যে এরা সমুদ্রের সমুদ্রের গভীরে বিচরণ করে। গভীর সমুদ্রের ঠান্ডা পরিবেশে অক্সিজেনের ঘনত্ব থাকে কম। এমন পরিবেশে হিমোগ্লোবিনের চেয়ে হিমোসায়ানিনই ভালোভাবে অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে।
লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের মতে, ঠান্ডা পানি ও কম অক্সিজেনযুক্ত পরিবেশে হিমোসায়ানিন হিমোগ্লোবিনের চেয়ে বেশি কার্যকর। গবেষকরা দেখেছেন, অ্যান্টার্কটিকার অক্টোপাস প্যারালেডন চার কোটি প্রজাতির অক্টোপাসের রক্তে অন্যান্য উষ্ণ অঞ্চলের অক্টোপাসের তুলনায় বেশি হিমোসায়ানিন থাকে। ফলে এটি অ্যান্টার্কটিকার প্রচণ্ড ঠান্ডা পানি এমনকি তাপমাত্রা মাইনাস ১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও টিকে থাকতে পারে।