শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করলেন বাকৃবির একদল গবেষক

শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনকারী গবেষক দল

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন। গত ১৫ মে, বুধবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক তাসলিমা খানম।

অধ্যাপক তাসলিমা খানমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ, জাপান ও সুইডেনের একদল গবেষক এ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের কাজ করেছেন। গবেষক দলে ছিলেন মাৎসবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী স্বর্ণা, হালিমা, জেসমিন, কানিজ, সারা ও নিত্যানন্দ।

ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে দেশি শিং মাছের নমুনা নিয়ে কাজ শুরু করে তারা। এরপর ২০২২ সালে দেশি শিং মাছের ৮০০ পোনার নমুনা নিয়ে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকোয়েন্সিং ও জিন শনাক্তকরণের কাজ করা হয়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে মাৎসবিজ্ঞান অনুষদ ২০২০ সালে শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স গবেষণা প্রকল্প শুরু করে। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে দেশি শিং মাছের নমুনা নিয়ে কাজ শুরু করে তারা। এরপর ২০২২ সালে দেশি শিং মাছের ৮০০ পোনার নমুনা নিয়ে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকোয়েন্সিং ও জিন শনাক্তকরণের কাজ করা হয়। জাপানে এই গবেষণার অর্থায়ন করেছে জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সায়েন্স (জেএসপিএস)। সর্বাধুনিক সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ও সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে বায়োইনফরমেটিকস এনালাইসিসের মাধ্যমে অবশেষে এ জিনোম সিকোয়েন্স গবেষণা সম্পন্ন হয় ২০২৪ সালে।

এ গবেষণার ফল চলতি বছর মার্চে জাপানিজ সোসাইটি অব ফিশারিজ সায়েন্স আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়। ওই সম্মেলনে ৩০০ বিজ্ঞানী গবেষণাটির উপাত্ত অনুমোদন করেন। এ ছাড়া এ গবেষণার ফল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ হিসেবে প্রকাশের জন্য বর্তমানে সম্পাদনা পর্যায়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন

এ গবেষণার প্রধান তাসলিমা খান বলেন, ‘গবেষণায় উদ্ভাবিত ড্রাফট জিনোম দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করা যাবে। এতে শুধু স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের পাশাপাশি কৃত্রিম পদ্ধতিতে উৎপাদন করা যাবে অনেক বেশি স্ত্রী শিং। জিনোম থেকে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ নির্ধারণ করার পাশাপাশি মাছের বৃদ্ধি, রোগপ্রতিরোধ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রচলিত হরমোন প্রয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তে “মার্কার অ্যাসিসটেড সিলেকশন” (এমএএস) পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে, যা অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব।’

আরও পড়ুন

ইয়ার বুকস অব ফিশারিজ স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশের ২০২০ ও ২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্বাদুপানিতে মোট উৎপাদিত মাছের ২ দশমিক ৫২ শতাংশই শিং মাছ। স্ত্রী শিং মাছের বৃদ্ধি পুরুষ শিং মাছ থেকে ৪০-৬০ শতাংশ বেশি। তাই এই মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়াতে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন করা যেতে পারে। এ জন্য লিঙ্গ নির্ধারণ করে জিন শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি।

শিং মাছ বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। বাণিজ্যিকভাবেও এ মাছ গুরুত্বপূর্ণ। লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে শিং মাছের গুরুত্ব রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছে ২২০ মিলিগ্রাম আয়রন বা লোহা থাকে। এ ছাড়া এতে থাকে আমিষ ও ক্যালসিয়াম। জিনোম সিকোয়েন্স করায় দেশে আরও বেশি শিং মাছ উৎপাদন করা যাবে। ফলে উৎপাদন বাড়লে কমবে শিং মাছের দাম।