ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার ২০২৪

প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতা এক বিশেষ আকর্ষণ। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের বার্ষিক প্রতিযোগিতা এটি। ৬০ বছর ধরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ প্রতিযোগিতা। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের কিছুটা ক্যামেরাবন্দি করেছেন কিছু ফটোগ্রাফার। এ প্রতিযোগিতায় ১৮টি ক্যাটাগরিতে ১১৭টি দেশের মোট ৫৯ হাজার ২২৮টির ছবি জমা পড়েছে। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। সেখান থেকে বিশ্বসেরা ৭টি ছবি বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হলো।

১. দ্য সোয়ার্ম অব লাইফ

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের একটি হ্রদ ভরে গেছে শাপলায়। ছবিতে শাপলাপাতার নিচে পানির জগৎ দেখা যাচ্ছে। পাতার নিচে সাঁতার কাটছে ব্যাঙের ছানা বা ব্যাঙ্গাচিগুলো। নিরাপদে সাঁতার কেটে হ্রদের গভীর থেকে অগভীর জায়গায় যাচ্ছে। কারণ, অগভীর জায়গায় খাবার পাওয়া যায় বেশি, শিকারিও কম। এরা সাধারণত ৪-১২ সপ্তাহের মধ্যে ব্যাঙে পরিণত হয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, এদের মধ্যে মাত্র এক শতাংশ বেঁচে থাকে। সুন্দর এই ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী শেন গস। ‘দ্য সোয়ার্ম অব লাইফ’ শিরোনামের এই ছবি ২০২৪ সালের ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতায় বিশ্বসেরা ছবির মর্যাদা পেয়েছে।

২. লাইফ আন্ডার ডেড উড  

১৫-১৭ বছর বয়সী ফটোগ্রাফার ক্যাটাগরির সেরা ছবি এটি। ছবিটি তুলেছেন জার্মান ফটোগ্রাফার অ্যালেক্সিস টিঙ্কার-সাভালাস। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি পচা কাঠের টুকরোর নিচে কালো-সাদা রঙের স্লাইম মোল্ড ও হালকা লালচে গোলাপি রঙের ছোট্ট স্প্রিংটেইল। অদ্ভুত সুন্দর ছবিটি তুলেছেন অ্যালেক্সিস। তবে ছবিটা তোলা সহজ ছিল না। কারণ, স্প্রিংটেইলগুলো অত্যন্ত দ্রুত লাফায়। ভিন্ন ভিন্ন ৩৬টি ছবি একসঙ্গে যুক্ত করে অ্যালেক্সিস এই ছবি তৈরি করেছেন।

৩. শিকার ও শিকারি

ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানে কে শিকারি আর কে শিকার। সাধারণত বড় প্রাণীই ছোটটাকে শিকার করে। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি ভিন্ন। জার্মানির একটা জঙ্গল থেকে ছবিটা তুলেছেন ইঙ্গো আর্ণ্ডট। লাল কাঠের পিঁপড়ার (Formica rufa) একটি দল একটি নীল গ্রাউন্ড বিটলকে ঘিরে ধরেছে। সাধারণত এই পিঁপড়া ছোট এফিড পোকা খায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে নিজেদের চেয়ে বড় পোকাও ধরে। কারণ, এসব পিঁপড়া অনেক শক্তিশালী। ‘উইনার অব বিহেভিয়ার’ ক্যাটাগরিতে ছবিটি সেরা হয়েছে। 

৪. হোপ ফর দ্য নিনু

সাদামাটা একটা ছবি। কিন্তু এটাই ‘ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড’ ক্যাটাগরিতে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছে। কিন্তু ছবির প্রাণীটাকে সহজে দেখা যায় না। এর নাম নিনু। শরীর ইঁদুরের মতো হলেও কান খরগোশের মতো। অস্ট্রেলিয়ার একটি সংরক্ষিত এলাকা থেকে ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার জ্যানিকো কেল্ক। তিনি এই বিশেষ প্রাণীটি খুঁজতে প্রতিদিন সকালে এই জঙ্গলে হাঁটতেন। হঠাৎ একদিন পেয়ে যান নিনুর পায়ের ছাপ। সেই ছাপ খুঁজে খুঁজে পৌঁছে যান নিনুর কাছে। অনেকখানি কষ্ট করার পর নিনুর এই ছবি তুলতে পেরেছেন তিনি। প্রাণীটি বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত।

৫. সাপ-কুমিড়ের লড়াই

একটা হলুদ অ্যানাকোন্ডা (Eunectes notaeus) একটা কুমিরকে (Caiman yacare) পেঁচিয়ে ধরেছে। দুটি প্রাণীর মাথাই রয়েছে পানির ওপরে। এমন পরিবেশ মুভি বা টেলিভিশনে দেখে থাকতে পারেন। সাধারণত কুমিরই সাপ খায়। কিন্তু এটা সাধারণ সাপ নয়। অ্যানাকোন্ডা। ফলে কে যে কাকে শেষ পর্যন্ত খাবে, তা আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। অ্যানাকোন্ডার পিঠে আবার দুটি ঘোড়ামাছি দেখা যাচ্ছে। এগুলো সাধারণত সরীসৃপের রক্ত চুষে খায়। অর্থাৎ এক ছবিতে তিন শিকারী। এদের মধ্যে শিকারও আছে। ছবিটি ব্রাজিলের গ্রোসো অরণ্য থেকে তুলেছেন কারিন আইগনার।

৬. পাখির মতো মুক্ত

একটা শিকলে ঝুলছে তালা। তালাটি খোলা। পাশেই বসে আছে একটা ছোট্ট পাখি। না, পাখিটিকে এই তালা ও শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়নি। ছবিটি স্পেনের ১০ বছরের এক ছেলে তুলেছে। তার বাড়ি স্পেনের ‘সিয়েরা দে গ্রাজালেমা’ উদ্যানের পাশে। নাম আলবার্তো রোমান গোমেজ। বাবার গাড়ির জানালা দিয়ে পাখিটিকে লক্ষ করছিল সে। খুব দ্রুত উড়ছিল ওটা, পোকামাকড় ধরছিল। তারপর একটু বিশ্রামের জন্য বসে। সেই অবস্থায় ছবিটি তোলে আলবার্তো। ১০ বছর বয়সী ফটোগ্রাফার ক্যাটাগরিতে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছে এটা। 

৭. এক মর্মান্তিক দৃশ্য

লর্ড হাউ দ্বীপে (অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যবর্তী তাসমান সাগরে অবস্থিত ২৮টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটা দ্বীপাঞ্চল) একটি মৃত শিয়ারওয়াটারের পেট থেকে ৪০৩টি প্লাস্টিকের টুকরো বের করা হয়েছে।  সেগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে পাশাপাশি। ভয়াবহ সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন বিজ্ঞানী জাস্টিন গিলিগান। অনেক দিন ধরে তিনি সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতি সম্পর্কে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সমুদ্রিক পাখি প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে। ‘উইনার অব দ্য ওশানস’ ক্যাটাগরিতে সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছেন এ বিজ্ঞানী।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও সায়েন্স ফোকাস

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ