প্রাণিজগৎ
নিরীহ পাখি ঘুঘু
এ দেশে কত রকম, কত ধরনের পাখি। রং-বেরঙের এসব পাখি নিয়ে লিখেছেন পাখিবিশারদ ও প্রকৃতিবিদ শরীফ খান…
মাঘ মাস। ভোরবেলা। কাঠবাদামের ডালে বসে রোদ পোহাচ্ছে দুটি ঘুঘু পাখি। ওই গাছটিরই মাথায় গুচ্ছ গুচ্ছ পরগাছা, ভেতরে ঘুঘু দুটির বাসা। বাসায় দুটি বাচ্চা, বয়স ১১-১২ দিন, পালক ফুটেছে আর ডানায় শক্তিও এসেছে। ভোরবেলায় আজ পেটে কিছু পড়েনি। খিদে তো আছেই। মাঘের শীতেও কাহিল ওরা। দুজনেই পাখা নেড়ে গলায় তুলছে খিদের কান্না, শীতের কান্না। মা-বাবা পাত্তাই দিচ্ছে না। দেবেই-বা কেন! মা-বাবা তো লাফ দিয়ে নিচের ওই ডালেও নামতে পারবে। মা-বাবা চাইছে ওরা বাসা ছেড়ে লাফ দিক। তারপর খাওয়াবে। এটাও এক ধরনের ট্রেনিং।
অস্থির বাচ্চা দুটি সত্যিই বাসা ছাড়ল। পরগাছার ঘন ডালপাতার ভেতর থেকে আনাড়ির মতো উড়ে এসে বসল মা-বাবার পাশে। কী খুশি ওরা উড়তে পেরে! যেন এইমাত্র রাজ্য জয় করেছে! বোকা বোকা চোখে দেখছে চারপাশের পৃথিবী। এতদিন বাসায় থেকে তো চারপাশটা, আকাশটা এভাবে দেখতে পারেনি ওরা। চোখ ভরা বিস্ময়!
ওদেরকে বিস্ময়ের ঘোরে রেখেই মা-বাবা ডানায় ফুর ফুর শব্দ তুলে উড়ে চলে গেল। এই যে যাওয়া, তাতে মিশে আছে খুশি। বাচ্চারা আর ২-৪ দিনের ভেতর উড়তে শিখে যাবে। আরও কয়েক দিন বাদে হয়ে যাবে স্বাবলম্বী। মা-বাবার ছুটি মিলবে।
মা-বাবা চলে যেতেই বাচ্চা দুটি নিজেদের অসহায় মনে করল। বাসা ছেড়ে এই তো প্রথম বাইরে। ভয় তো একটু লাগবেই। ঘন ঘন ঘাড়-মাথা নেড়ে তাকাচ্ছে এদিক-ওদিক। না, ভয়ের তো কিছু নেই! দুটিতে ডালে বুক মিশিয়ে পাশাপাশি রোদ-পিঠ হয়ে বসল। কী মিষ্টি রোদ! আর ওরা কি না এতদিন বাসার ছায়ায় বসে শীতে কষ্ট পেয়েছে। অবশ্য রাতে আর খুব ভোরে মায়ের বুকের গরমে থাকা গেছে আরামে। আহা রে মায়ের বুক! দুনিয়ার সব সুখ ওখানে।
ও পাশের রাজশিরীষের ডালে এসে বসল একটি শিক্রা বাজ। নড়ল না ঘুঘুর বাচ্চা দুটি। ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানে না, এমন ভঙ্গিতে উড়ল বাজটি। তারপর কাঠবাদামের মাথার অনেক ওপরে উঠে গেল। আচমকা ঘুরে এসে ঝড়ের বেগে নেমে এল ঘুঘুর বাচ্চাদের দিকে। ভয়ার্ত বাচ্চা দুটির পিলে গেল চমকে, গলায় ভয়ের শব্দ তুলে একটি ঢুকে পড়ল পরগাছার ভেতর, বসল বাসায়। অন্যটি শিক্রার নখরে গাঁথতে গাঁথতেও মুক্তি পেয়ে গেল সরু ডালটার কারণে। দিশেহারা হয়ে সে পালাতে চেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল মাটিতে। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় শিক্রা বাজ ঘুরে এসেই ছোঁ মারল মাটিতে। না, ঘুঘুর বাচ্চা ঢুকে পড়েছে একটি কাঁটাঝোপের তলায়। ব্যর্থ শিক্রা গলায় ব্যর্থতার আওয়াজ তুলে নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বসল গিয়ে আবার রাজশিরীষের ডালে। দেখছে ঘুঘুর বাচ্চাটির কয়েক গুচ্ছ ফুল-পালক তুলোর মতো পাক খেতে খেতে মাটির দিকে নামছে। তারই নখরে বিঁধে খুলে গেছে ওই পালকগুলো। আসল শিকার গেছে ফসকে।
বড়গুলোকে বলা হয় পায়রা ও অপেক্ষাকৃত ছোটগুলোকে ঘুঘু। পায়রাদের লেজ খাটো ধরনের, ঘুঘুদের লম্বাটে।
যে ঘুঘুর কথা লেখার শুরুতে বলেছি, ওরা ছিল তিলা বা ছিটঘুঘু। বাচ্চার জন্য বাংলাদেশের সব ঘুঘুই কম-বেশি কাঁদে, কিন্তু ওরাই কাঁদে উচ্চস্বরে ৪-৫ দিন পর্যন্ত। ওরা তো আর মানুষের মতো কাঁদতে পারে না, ডাকে। ওই ডাক শুনলে একজন মানবশিশুও বুঝতে পারে, ওই ঘুঘুটি কাঁদছে।
পৃথিবীতে কত রকম ঘুঘু আছে? অতি সংক্ষেপে জানা যাক বংশ পরিচয়। দুনিয়ায় বর্তমানে যে ২৮৯ রকম পায়রা দেখা যায়, তাদের সবারই আদিপুরুষ হচ্ছে বুনো কবুতর, আমরা যাদের জালালি কবুতর বলি। ওরাই হচ্ছে বুনো কবুতর। পায়রা বা কবুতর আর ঘুঘুরা হচ্ছে একই পরিবারের পাখি। এই পরিবারের পাখি প্রজাতির সংখ্যা ২৮৯টি।
বড়গুলোকে বলা হয় পায়রা ও অপেক্ষাকৃত ছোটগুলোকে ঘুঘু। পায়রাদের লেজ খাটো ধরনের, ঘুঘুদের লম্বাটে।
ঘুঘুদের পা ছোট, ঘাড় খাটো। শরীরের তুলনায় মাথা ছোট ও গোলাকার। সুন্দর চোখ। ছোট ঠোঁট, আগার দিকটা ভেতরমুখো কিছুটা বাঁকা। ঠোঁটের মাঝখানটা পাতলা। নাকের ছিদ্র সুস্পষ্ট। ঠোঁট নলাকৃতির। শরীরে ছাই ও বাদামি রঙের ভাগ বেশি। পালক চ্যাপ্টা ধরনের। সহজে মাটিতে নামতে পারে। দ্রুত উড়তেও পারে। আচমকা ঘুরতে পারে। বাসা বাঁধার মৌসুম ছাড়া ঝাঁকে থাকতে পছন্দ করে। সবারই গলার স্বর মিষ্টি ও মোলায়েম ধরনের। এরা শত্রুকে আক্রমণ করতে পারে না বা জানে না।
ঘুঘুদের খাদ্য: ধান, গম, তিল, সরিষাসহ নানা রকম শস্য ও বীজ, শাক-সবজি, নরম ঘাসও খায় শরীরে লবণের চাহিদা পূরণের জন্য। অনেক প্রজাতির ঘুঘু ফলসহ পোকামাকড়-কীটপতঙ্গ খায়। সবাই জলপান করে ঠোঁট জলে ঢুকিয়ে, মাথা-ঠোঁট উঁচু করে। জলপানের দৃশ্য খুব চমৎকার। সবাই মাটিতে নামে। হাঁটতে জানে ভালো। বেশ চতুর।
বাসা, ডিম, বাচ্চা: সব ধরনের ঘুঘুই বাসা করে দায়সারা গোছের। কাঠি-কুঠি, শুকনো ঘাস-লতা ফেলে কোনো রকমে ডিম পাড়তে পারলেই যেন হলো। ঝোপঝাড়, গাছের ডাল-হোক উঁচু বা নিচুতে, পছন্দসই জায়গা পেলেই বাসা করে। বছরে কমপক্ষে এক জোড়া ঘুঘু ৩ বার বাচ্চা দেয়। ডিম খোয়া গেলে সে সংখ্যা ৫ বার পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে। বাসা বাঁধার সময় সতর্ক থাকে। দুজইে বাসা তৈরি করে। জায়গা নির্বাচনে লাগায় ১-২ দিন। বাসা তৈরি শেষ হয় ২-৪ দিনে। বাসার কাছে ডিমখোকো সাপ দেখলে ভয়ে পালায়।
স্বাবলম্বী হয় আরো ৬-১২ দিন পরে। বাচ্চারা হয় জন্মান্ধ আর খাই খাই স্বভাবের। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। খিদের কান্না বেশ দূর থেকে শোনা যায়।
অধিকাংশ ঘুঘুই ২টি ডিম পাড়ে। সাদা রঙের, কোনো কোনো ডিমের রং ঘোলাটে হলদে। মেয়ে-পুরুষ পালা করে তা দেয়। তবে মেয়েটির ভাগে বেশি পড়ে। গড়ে ১২-১৭ দিনে ডিম ফোটে। মা-বাবা পালা করে খাওয়ায়। প্রথম দিকে ঘুঘুরা বাচ্চাদের এক ধরনের তরল খাদ্য পেট থেকে উগরে খেতে দেয়, এ সময় গলা-বুক কাঁপে ছন্দময় ভঙ্গিতে। এই খাদ্যকে বলা হয় পায়রার দুধ। পায়রার দুধ? বিষয়টি বেশ মজার, তাই না? গড়ে ১০-১৩ দিন পরে বাচ্চারা ডানা মেলে উড়তে শেখে।
স্বাবলম্বী হয় আরো ৬-১২ দিন পরে। বাচ্চারা হয় জন্মান্ধ আর খাই খাই স্বভাবের। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। খিদের কান্না বেশ দূর থেকে শোনা যায়।
ঘুঘুরা খুব নিরীহ পাখি। মেয়ে-পুরুষ আলাদা করা সহজ নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দ্বীপ ছাড়া বিশ্বের সবদেশে ঘুঘু দেখা যায়। সবচেয়ে ছোট যে ঘুঘু, তার নাম মাটি-ঘুঘু। শরীরের মাপ প্রায় ১৮ সেন্টিমিটার। হরিয়াল হচ্ছে ঘুঘুদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এছাড়া মর্নিং ডোভ, কোয়েল ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, নামাকুয়া ঘুঘু ইত্যাদি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হরিয়াল ঠিক ঘুঘু নয়।
১. ধবল বা রাজঘুঘু: স্বাস্থ্যবান, গোলগাল ধরনের পাখি। খোলা মাঠ পছন্দ। শরীরে সাদাটে ধূসরের ভাগ বেশি। বুক মাটিরঙা। আঞ্চলিক ভাষায় বাগেরহাট-খুলনা এলাকায় বলা হয় ধলি বা ধইলে ঘুঘু। দুই যুগ আগে প্রচুর ছিল। এখন দেখাই যায় না বলতে গেলে। প্রায় বুনো কবুতরের মতো বড়।
২. তিলাঘুঘু বা ছিটঘুঘু: ঢাকা শহরেও (বন-বাগান-পার্কে) দেখা যায়। বাংলাদেশে এদের সংখ্যা বেশি। লম্বায় ৩০ সেন্টিমিটার। মাথার চাঁদি ছাই-বাদামি, ঘাড়ের নিচে সাদা সাদা ছিট ও ছোপ ঘন হয়ে আছে, পিঠে সে ছিট ও ছোপ ছড়িয়েছে ক্রমশ পাতলা হয়ে। পিঠ কালচে, বাদামি ও ছাই রঙের। লেজের আগা সাদাটে। মেটে বাদামি বুক। পেট সাদাটে। মাঠ-বাগান সব জায়গায় দেখা যায়। কণ্ঠস্বর 'কুর কুর কুর-কুরু...কুরু...কুরু...'। ডানায় পটপট শব্দ তুলতে পারে। এদের বাসার ডিমে কেউ হাত দিলে সেই ডিম ওরা খেয়ে ফেলে। বাচ্চা হারানোর শোকে ৫/৭ দিন পর্যন্ত কাঁদে। আঞ্চলিকভাবে এদের পাতিঘুঘুও বলা হয়।
৩. কণ্ঠিঘুঘু: বাগেরহাট-খুলনায় বলে বাঁশঘুঘু বা মটরঘুঘু। এরা লাজুক। বন-বাগান, ঝোপঝাড় বেশি পছন্দ। ওড়েও মাটির অল্প ওপর দিয়ে। দ্রুত উড়তে পারে। এত নিচ দিয়ে ওড়ে যে অনেক সময় বেজি বা বনবিড়াল আচমকা থাবা মেরে এদেরকে কুপোকাত করে। এরা একটা নির্দিষ্ট পথ ধরে ওড়ে। বেজি বনবিড়াল তা জানে। বাগেরহাট-খুলনা এলাকায় কুসংস্কার আছে যে, এদের ডানার বাতাস লাগলে কালাজ্বর হয়। ব্যাপারটি একেবারেই মিথ্যা। খোলা মাঠের গাছেও বাসা করে কখনো কখনো। এরা লম্বায় ২২-২৩ সেন্টিমিটার। পোড়া ইটের মতো রং হয় পিঠ, ডানা ও লেজের ওপরিভাগের। ডানার আগা সরু ধরনের এবং গাছের ডালে বসলে তা কাঁকড়ার চিমটির মতো হয়ে মিশে থাকে। পিঠের নিচের দিকটা ওই চিমটির মতো জায়গার ফাঁক দিয়ে দেখা যায়। মাথা ধূসর ছাই। মাথার চাঁদি-লালচে ধূসর। গলা ধূসর-সাদাটে। ঘাড় ধূসর। লেজের তলা সাদাটে। মেয়েটির ঘাড়ে চওড়া কালো বলয় আছে। পিঠের নিচের দিকটা চকচকে শ্লেটরঙা, তাতে ধূসর-ছাইয়ের মিশেল। মেয়েটির ঘাড়ে যেমন বলয় আছে, তেমনি তার রঙে লালচের চেয়ে বাদামির ভাগটা বেশি। কণ্ঠস্বর 'গুরুর গুরু, জুরু জুরু...জিগ... জিগ', সহজে ডাকে না। কটর কটর, মটর মটর, শব্দও করতে পারে দ্রুত তালে। তাই বাগেরহাট-খুলনায় এদের মটর ঘুঘু বলা হয়। ডাক শুনে মনে হয়, যাঁতাকলে ডাল পেষা হচ্ছে। অন্য একটি ঘুঘুকেও মটরঘুঘু বলে।
ঘুঘুরা মোটেও ভালো নেই বাংলাদেশে। সুন্দরবন, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-টিলাময় জঙ্গলেও ভালো নেই ওরা। খাবারের অভাব নেই। বাসা বাঁধার জায়াগার অভাব নেই। অভাব শুধু ভালোবাসার।
৫. সবুজ ঘুঘু: মাপ ২৬ সেন্টিমিটার। বাগেরহাট-খুলনায় এদেরও বলা হয় বাঁশঘুঘু। বাঁশঝাড় এদের খুব পছন্দ। বাঁশের কঞ্চিতে বাসা বাঁধতে ভালোবাসে। এদের ডানার বাতাস নিয়েও একই বিশ্বাস আছে। এদের শরীরে ধাতব সবুজের ভাগ বেশি, তাতে হালকা নীলচের মিশেল। চোখের ওপরিভাগ সাদাটে। কপালও তাই। মাথার চাঁদি ছাইরঙা। বুক-গলা সুরমা-লাল। তাতে চকচকে বাদামির আভা মিলে সুন্দর পাখি। কণ্ঠস্বর করুণ। লাজুক পাখি। বন-বাগানে হেঁটে মূলত মাটিতে পড়া ফলের বীজ খায়। হজমের জন্য এরা ঢিল ও শক্ত মাটি, ইট বা পাথরের কুঁচিও গেলে। সব ধরনের ঘুঘুই কম-বেশি এই কাজটি করে।
৬. লালচে ছিটঘুঘু: হঠাৎ করে তিলা বা ছিটঘুঘু বলেই মনে হয়। ৩২ সেন্টিমিটার লম্বা। ঘাড়ে ছাই-কালো ছিট ছিট লম্বা টান আছে কয়েকটা। ডানা রঙচঙা, লালচে-বাদামি, তার ওপরে কালচে ছিট ও ছোপের কারুকাজ। বুক-পেট ও মাথা ধূসর-সাদাটে, ঘাড়-মাথাও তাই। কণ্ঠস্বর গুরুগম্ভীর। ‘ঘুগ্রো ঘুগ, ঘু...ঘু, ঘুর ঘুর, ঘররো...’
৭. বড় হরিয়াল ঘুঘু: ৩৩ সেন্টিমিটার। বুক-পেট হলুদ, চকচকে। পা-ও তাই। মাথা জলপাই সবুজ, ডানার কিনারাও তাই। সুন্দর পাখি। চতুর। বিপদের গন্ধ পেলে গাছের ডাল-পাতার ভেতরে এমনভাবে চুপ করে মিশে থাকে যে, খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এরা মূলত ফলখেকো। ডুমুর, বট, উড়ে আম, কলা, কুলবরই, অশ্বথ, পাকুড় অত্যন্ত প্রিয়। এরা দলপতির অধীনে থাকে। বিপদসঙ্কেত পাওয়ার পর কেউ যদি চুপ করে না থেকে নড়াচড়া করে, তাহলে বিপদ কেটে যাওয়ার পর সবাই মিলে ওই পাখিটিকে আক্রমণ করে, শাস্তি দেয়।
৮. ছোট হরিয়াল: মাপ ২৮ সেন্টিমিটার। চকলেট-মেরুন পিঠ। মাথা ছাইরঙা। বুক কমলা। হলদেটে সবুজ গলা। ছোট হরিয়াল অনেকটা বড় হরিয়ালের মতোই দেখতে, রঙের ঔজ্জ্বল্য কম। সবুজ আর হলুদের মিশেল শরীরে। তবে সব রঙই ম্লান। গলা চকচকে হলদেটে-সবুজ, পেট উজ্জ্বল সবুজাভ। পা আলতা-লাল। বড় হরিয়ালের মতোই ফলখেকো। দলবদ্ধ। দলপতি থাকে। সাবধানে থাকে ও ডাকে। কণ্ঠস্বর বড় হরিয়ালের চেয়ে জোরালো, অনেকটা তীক্ষ্ণ শিসধ্বনির মতো। এছাড়াও রয়েছে ছোট বাদামি ঘুঘু। ঘাড়-মাথা হাস্যকর ভঙ্গিতে অসম্ভব দ্রুত ওপর-নিচে করে। একই ডাক দ্রুততালে বারবার গলায় তোলে ‘কুক্ কুরু, কুক্ কুরু, কুরু টু কুক’। এদের মাপ ২৬ সেন্টিমিটার। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘুঘুটির বাস সিলেট-চট্টগ্রামের টিলা-পাহাড়ময় বনে। নাম ধুমকল। ইংরেজি নাম Green Imperial pigeon, বৈজ্ঞানিক নাম Ducula aenea। শরীরের মাপ ৪৩-৪৭ সেন্টিমিটার।
ঘুঘুরা মোটেও ভালো নেই বাংলাদেশে। সুন্দরবন, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-টিলাময় জঙ্গলেও ভালো নেই ওরা। খাবারের অভাব নেই। বাসা বাঁধার জায়াগার অভাব নেই। অভাব শুধু ভালোবাসার। নির্বিচার শিকারের আওতায় পড়ে ওরা আজ দিশেহারা। আমরা কি কখনো সোচ্চার হব না নিরীহ সুন্দর ওই পাখিগুলোকে বাঁচানোর জন্য? আমাদের শিশুরা কি শুনবে না ঘুমঘুম ডাক, দেখবে না ওদের? সুন্দর ও নিরীহ পাখি ঘুঘুদের বাঁচানোর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা খুব জরুরি।