প্রকৃতির জন্য মৌমাছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। যেখানেই সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে, সেখানেই দেখা মিলবে মৌমাছির। এরা অত্যন্ত কর্মঠ ও বুদ্ধিমান। আজ ২০ মে, বিশ্ব মৌমাছি দিবসে জানুন, মৌমাছি কতটা কর্মঠ ও বুদ্ধিমান...
প্রকৃতির জন্য মৌমাছি অত্যন্ত জরুরি। কারণ মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের কারণে গাছে ফুল ফোটে, ফল হয়। মৌমাছির মতো কীটপতঙ্গ না থাকলে গাছে ফুল ফুটত না, ফল হতো না। প্রায় ৯০ ভাগ বন্য উদ্ভিদে পরাগায়ন ঘটায় মৌমাছি।
মৌমাছিরা দলবদ্ধভাবে উপনিবেশে বাস করে। একটি চাকে বা দলে থাকে তিন ধরনের মৌমাছি। রানী মৌমাছি, শ্রমিক মৌমাছি ও পুরুষ মৌমাছি। রানী মৌমাছি দলের নেতা ও আকারে সবচেয়ে বড়। সম্পূর্ণ দলকে গাইড করার পাশপাশি পরবর্তী রানী মৌমাছি জন্ম দেওয়া তার কাজ। শ্রমিক মৌমাছিদের কাজ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা এবং নিজেদের চাক বানানো। সব শ্রমিক মৌমাছিই নারী। এই শ্রমিক মৌমাছিগুলোকেই আমরা বাইরে উড়তে দেখি। আর পুরুষ মৌমাছির কাজ রানীর আশেপাশে থাকা। তবে গ্রীষ্ম ও বসন্তকাল ছাড়া বাকি মৌসুমে পুরুষ মৌমাছিরা অলস সময় কাটায়।
মৌমাছি সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার মধুর জন্য। কিন্তু এই মধু আমাদের জন্য তৈরি করে না মৌমাছিরা। বরং শীতকালে নিজেদের খাওয়ার জন্য তারা মধু সংগ্রহ করে রাখে। প্রয়োজনের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি মধু উৎপাদন করে রাখে এরা। আর সুযোগ বুঝে সেই অতিরিক্ত মধুই আমরা নিয়ে নিই।
রানী মৌমাছি মারা গেলে শ্রমিক মৌমাছিরা সদ্য জন্মানো একটি রানী মৌমাছিকে বাছাই করে। তাকে রয়্যাল জেলি নামে একধরনের বিশেষ খাবার খাওয়ানো হয়। ফলে দ্রুত বড় হতে থাকে মৌমাছিটি। এটিই প্রাপ্তবয়স্ক হলে রানী মৌমাছির জায়গা দখল করে।
মৌমাছিরা ঘন্টায় প্রায় ৩৫ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে। এদের দুই পাশে দুটি করে মোট চারটি ডানা থাকে। সেকেন্ডে ২৪০ বার ডানা ঝাপটায় এরা। মৌমাছি ক্ষুধার্ত থাকলে দিনে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। তবে সাধারণত এরা চাকের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে।
মৌমাছির প্রায় ১৭০টি গন্ধ নেওয়ার রিসেপ্টর আছে। গন্ধ শুকে তারা বাসায় ফিরতে পারে। খাবারের সন্ধানে গিয়ে ফুল চিনতেও সাহায্যে করে এই রিসেপ্টর।
মৌমাছি গড়ে এক থেকে দেড় মাস বাঁচে। এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি মৌমাছি প্রায় ১/১২ চা চামচ মধু সংগ্রহ করে। যা প্রায় ০.৮ গ্রামের সমান।
রানী মৌমাছি বাঁচে গড়ে পাঁচ বছর। গ্রীষ্মকালে রানী মৌমাছি সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। এ সময় প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০টি ডিম পাড়ে রানি মৌমাছি।
মৌচাক দেখলে মনে হয় এরা বুঝি গণিত জানে। কত সুন্দর করে ষড়ভুজাকারে মৌচাকের কুঠুরিগুলো সাজানো থাকে। হিসাব করে দেখা গেছে, এই জ্যামিতিক আকৃতির কুঠুরিতেই সবচেয়ে বেশি মধু রাখা যায়। ষড়ভূজাকার না হয়ে বৃত্তাকার বা গোলাকার হলে এত মধু ধরতো না। কিন্তু মৌমাছি এটা বুঝে করে না। বরং প্রাকৃতিক নিয়মেই কুঠুরিগুলো ষড়ভূজাকার হয়ে যায়।
প্রায় ৩ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে মৌমাছি টিকে আছে। প্রতিটি মৌমাছির চাকে গড়ে ৫০ হাজার মৌমাছি থাকে। ১ কেজি মধু সংগ্রহ করতে প্রায় ৪০ লাখ ফুলে ঘুরতে হয় মৌমাছিদের।