ঝাল খেলে গরম লাগে কেন

ঝাল খাবার স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে শরীরে গরম লাগার অনুভূতি তৈরি করেসূত্র: সংগৃহীত

ঝাল একদমই পছন্দ করেন না বলে বন্ধুমহলে আপনার বিশেষ খ্যাতি আছে। আড্ডায় বসে ঝালমুড়ি খেতে খেতে তাই বন্ধুরা প্রায় আপনাকে খোঁচায়। তাদের যুক্তি, ঝালমুড়ি খাবেন অথচ ঝাল লাগবে না, তা কেমন করে হয়! ঝালপ্রেমী এই বন্ধুদের এক হাত দেখে নিতে সেদিন মুড়িওয়ালাকে বোম্বাই মরিচ দিয়ে মুড়ি মাখাতে বললেন। যথারীতি খাওয়া শুরু। কিন্তু কয়েক গ্রাস খাওয়ার পর খেয়াল করলেন, শরীরে গরম হয়ে উঠছে, কপালে জমছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এমনকি নাক-কান দিয়ে রীতিমতো ভাপ বের হচ্ছে। কে জানে, ধোঁয়াও বেরোতে পারে। মস্তিষ্কে রীতিমতো অগ্নুৎপাত শুরু হয়ে গেছে! খেলেন ঝাল, অথচ লাগছে গরম! কারণটা কী?

মরিচের প্রধান উপাদানের নাম ক্যাপসাইসিন। এটি একটি রাসায়নিক যৌগ। ক্যাপসাইসিনয়েড নামের সমধর্মী বেশ কিছু যৌগের মধ্যে এটি অন্যতম। মুখ ও জিহ্বায় থাকা ভ্যানিলয়েড নামের সংবেদী কোষের (রিসেপ্টর) সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে ক্যাপসাইসিনয়েড যৌগগুলো। সংবেদী এ কোষ মূলত তাপমাত্রা শনাক্ত করে। তারপর সে তথ্য স্নায়ুর মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয় মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক তখন এই কোষগুলোর তাপমাত্রার তথ্য পায়, বুঝতে পারে দেহের তাপমাত্রা কত।

আমরা যখন ঝাল কিছু খাই, তখন এ কোষগুলো উদ্দীপ্ত হয়। স্বাদের সঙ্গে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় তাপমাত্রা সম্পর্কিত ভুল বার্তা। মস্তিষ্ক তখন তাপমাত্রা বেশি হলে শরীরের যে ধরনের আচরণ করার কথা, সেই সংকেত পাঠায় দেহের অন্য সব স্নায়ুতে। ফলে, আমাদের গরম লাগে।

ঝাল খেতে ভালো লাগলে মন ভরে খান। উপভোগ করুন। গরম লাগলে ফ্যানের নিচে বসুন।

অর্থাৎ ঝাল খাবার স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে শরীরে গরম লাগার অনুভূতি তৈরি করে। হয়তো ভাবতে পারেন, হতচ্ছাড়া ঝাল খাওয়া বাদ দিলে কী সমস্যা? বিষয়টা এত সহজ নয়। ঝাল খাবার শরীরে গরমের অনুভূতি তৈরির পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। ক্যাপসাইসিনয়েড সাধারণত শক্তি বাড়ানো এবং রুচি কমিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ পরিচিত। একইসঙ্গে এ যৌগগুলো মুখের লালা নিঃসরণের হার বাড়িয়ে দেয়। ফলে ভাত, রুটি বা মাংসের মতো শক্ত খাবার চিবানো ও গিলে ফেলার কাজটি হয়ে যায় সহজ। তা ছাড়া ঝাল খাওয়ার পর মুখে যে জ্বালাপোড়ার ভাব তৈরি হয়, তা অনেকেই উপভোগ করেন। (কেন জ্বালাপোড়া তৈরি হয়, সেটা ভিন্ন আলোচনা। আপাতত প্রসঙ্গে থাকি।) কষ্ট উপেক্ষা করে উপভোগ করার পেছনেও ‘গরম লাগা’র বিষয়টি কাজ করে। গরম লাগার কারণেই মস্তিষ্ক এন্ডোরফিন নামে একধরনের হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোন প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে পরিচিত। মানে, ঝালের কারণে শরীরে গরম লাগার অনুভূতি তৈরি হলেও তা উপকারী।

তাই ঝাল খেতে ভালো লাগলে মন ভরে খান। উপভোগ করুন। গরম লাগলে ফ্যানের নিচে বসুন। যতক্ষণ পর্যন্ত অতিরিক্ত পরিমাণে না খাচ্ছেন, ভয়ের কিছু নেই। অতিরিক্ত পরিমাণ কতটুকু, তা আপনিই ভালো বুঝবেন। কারণ সবার ঝাল গ্রহণের ক্ষমতা সমান নয়। তাই ঝাল খেতে ভালো না লাগলে জোর করে খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

এবার ছোট্ট একটা পরামর্শ দিয়ে শেষ করি। অতিরিক্ত ঝাল লাগলে অনেকেই পানি খান। কিন্তু তাতে ঝাল কমে না। ঝালের যন্ত্রণা কমাতে দুধ বেশ কার্যকর। দুধের মধ্যে ক্যাসিন নামে একধরনের প্রোটিন থাকে। এটা ক্যাপসাইসিনকে ভেঙে ফেলতে পারে। ফলে ঝালের দৌরাত্ম্য কমে আসে মুখে। অতিরিক্ত ঝাল ও গরমের অনুভূতি কমে যায় দ্রুতই।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, উইকিপিডিয়া, হাউস্টোন মেথোডিস্ট

আরও পড়ুন