প্রতি মুহূর্তে রূপ বদলায় আবহাওয়া। এই নীল আকাশ, আবার পরমূহূর্তেই মেঘের ডাকা আকাশ। মাঝেমধ্যে আবার দেখা যায় বৃষ্টির ফোঁটা। এ সব দৃশ্যই আলোকচিত্রীরা ক্যামেরাবন্দী করেন। সেসব ছবি নিয়ে হয় প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্তের ফটোগ্রাফাররা ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ওয়েদার ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান রয়্যাল মেটিওরোলজিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক প্রতিযোগিতা এটি। বিশ্বের ৮৪ দেশের আলোকচিত্রীরা এই প্রতিযোগিতায় ছবি জমা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এ প্রতিযোগিতা থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ছবি দিয়ে একটি বিশেষ গ্যালারি সাজানো হয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯-এ। এখানে কিছু বিশেষ ছবি বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
১. আলোর নৃত্য
২০২৪ সালে সেরা ছবির তকমা পেয়েছেন চীনের সাংহাইয়ের ওয়াং জিন। ‘স্প্রাইটস ড্যান্সিং ইন দ্য ডার্ক নাইট’ শিরোনামে ছবিটি জমা দিয়েছিলেন। বজ্রপাতের পরে আকাশে প্রায় ৫০ মাইল ওপরে তৈরি হওয়া একধরনের আলোর বিকিরণ এগুলো। সাধারণত লাল রঙেরই হয়। সাংহাইয়ের আকাশে বজ্রঝড় দেখা দিলে জিন চংমিং কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে এই বিরল দৃশ্যে ক্যামেরাবন্দি করেন। বিচারকদের মতে, এই ছবি খুবই বিরল।
২. হোয়ারফ্রস্ট হেভেন
এ বছর দ্বিতীয় হয়েছে এই ছবিটি। সাধামাটা এই ছবির মালিক ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি গ্রে। তিনি ছবির নাম দিয়েছেন ‘হোয়ারফ্রস্ট হেভেন’। যুক্তরাজ্যের ডারভেন্ট ভ্যালি থেকে তিনি ছবিটি তুলেছেন। ছবিতে হিমশীতল সকালে কুয়াশা ঢাকা পাহাড়, বিভিন্ন ধরনের গাছ ও কুয়াশার পাতলা স্তর দেখা যাচ্ছে। বিচারকরা এই ছবির রং ও আলোর খেলায় মুগ্ধ হয়েছেন।
৩. দ্বীপ, রংধনু ও সমুদ্র
প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন ইংল্যান্ডের ফটোগ্রাফার জেমি রাসেল। ‘ইভিনিং শাওয়ার ওভার দ্য নিডলস’ নামে এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের আইল অফ উইটে অবস্থিত নিডলস দ্বীপের অপরূপ রংধনু। ছবিটিতে দ্বীপের সামনে কালো মেঘ থেকে হওয়া বৃষ্টিও দেখা যাচ্ছে।
৪. আগুন ও বরফ
বজ্রঝড় শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তের ছবি এটি। ছবির ডান দিকে সূর্যাস্তের লালচে আভা দেখা যাচ্ছে এবং বাঁয়ে দেখা যাচ্ছে নীল আকাশ। আর মাঝে মেঘগুলো ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে। এই বিশাল ছবিটি তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের তরুণ ফটোগ্রাফার লিঙ্কন হুইলারাইট।
৫. তিস্তার গাছ
ছবিটি তুলেছেন বাংলাদেশের ফটোগ্রাফার মো. শফিউল ইসলাম। ড্রোন ক্যামেরায় ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর হরিপুর অঞ্চলের এই শোচনীয় দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেন তিনি। নদীর পানির স্তর নেমে যাওয়া ও খরার সময় নদীটি পাতাহীন গাছের মতো দেখায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তিস্তা নদীর পানির স্তরের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটছে। খরার সময় নদী শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা এবং নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও বেড়েছে।
৬. আগ্নেওগিরির পাহাড়
ইন্দোনেশিয়ার ফটোগ্রাফার নুর সাইরীন নাতাসা বিনতে আজহারিন সূর্যোদয় দেখার আশায় ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভায় যান। কিন্তু ভোরের আলোয় তিনি এই আগ্নেয়গিরির অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পান। এখনো আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়া উঠছে। তিনি মোবাইল ফোনের সাহায্যেই এই ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করেছেন।
৭. বরফের গাছপালা
ফটোগ্রাফার আন্দ্রেয়া ক্লিন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জার্মানির কোলনের পূর্বের অঞ্চলে থেকে এ ছবিটি তুলেছেন। ছবিতে গাছের ডালপালা সব বরফে জমে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ মিটার উঁচুতে ছিল ওই অঞ্চল। যেখানে সবকিছু প্রায় ১০-২০ মিলিমিটার পুরু বরফে ঢাকা পরে। কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতের কারণে শত শত গাছপালা হিমায়িত অবস্থায় ছিল তখন। এই স্বচ্ছ অবস্থাকে বলা হয় গ্লেজ।