লঘু ক্ষতের প্রাথমিক চিকিৎসা

মাঝেমধ্যে আমরা সবাই দুর্ঘটনার মুখে পড়ি। পড়ে গিয়ে ব্যথা পাই, রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করা গেলে বড় ধরনের সমস্যার হাত থেকে বাঁচা যায়। ‘দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা’ বইয়ে সেরকমই কিছু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ক্ষত সৃষ্টি, রক্তপাত, হাড় ভাঙ্গা, পুড়ে যাওয়া কিংবা সামান্য আহত হওয়ার ফলে যা যা হতে পারে, সেগুলোর প্রাথমিক চিকিৎসার উপায় বাতলে দেওয়া হয়েছে এই বইয়ে। বইটি ১৯৭৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। এরপর ১৯৮২ সালে মির পাবলিশার্স মূল বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। ১৯৮৬ সালে দ্বিজেন শর্মার বাংলা অনুবাদে বইটি প্রকাশ করে মির প্রকাশন। বইয়ের লেখক ভ. ভ. ইউদেনিচ। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।

লঘু ক্ষত (কাটা, খোঁচা, আঁচড়, ত্বকভ্রংশ, কাঁটা-ফোটা) দৈনন্দিন জীবনের নিয়মিত ঘটনা। যদিও ওই ক্ষতগুলো এমনিতে মারাত্মক নয়। এতে কর্মক্ষমতা নষ্ট হয় না, কিন্তু যথাযথ প্রাথমিক চিকিৎসার অভাবে সপুঁজ প্রদাহজনিত কারণে এগুলোও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।

এমনকি, লঘু ক্ষতেও চামড়া কেটে গেলে তৎক্ষণাৎ তাতে ৫ শতাংশ আয়োডিন টিংচার লাগিয়ে নির্বীজিত ব্যান্ডেজে ঢাকনি দেওয়া উচিত। চামড়া ও ক্ষতে সংক্রমণ ঘটলে ক্ষতের পাশের চামড়া ০.৫ শতাংশ অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবণে ও ক্ষত ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পারক্সাইডে মোছা প্রয়োজন। ক্ষতের কিনার মসৃণ ও সুষম, কিন্তু ক্ষতটি ০.৫ সেন্টিমিটারের বেশি চওড়া হলে কিনারগুলো জুড়ে দেয়াই নিয়ম। সে জন্য ক্ষতের চেয়ে খাটো এক টুকরা আঠালো প্লাস্টার ফালি থেকে কেটে ক্ষতের একপাশে তার এক প্রান্ত এঁটে ক্ষতের অপর কিনার কাছিয়ে এনে প্লাস্টারের অন্য প্রান্ত দিয়ে আটকে দিতে হয়। প্লাস্টার দিয়ে ক্ষত পুরোপুরি ঢেকে ফেলা উচিত নয়। ক্ষতের প্রান্তগুলো খোলা রাখা প্রয়োজন। তারপর প্লাস্টারের ওপর ক্ষতে একটি নির্বীজিত ব্যান্ডেজ লাগাতে হয়। লঘু ক্ষত বা খোঁচা কলোডিয়ন বা বিশেষ আঠা দিয়ে ঢাকা উচিত।

আরও পড়ুন

স্পিরিট-ব্যান্ডেজ দিয়ে খোঁচাক্ষত ঢেকে রাখা বাঞ্ছনীয়। হাতের বা পায়ের আঙুল থেঁতলে গেলে প্রায়ই নখের নিচে রক্তক্ষরণ ঘটে এবং পরে তাতে পুঁজ জমে তীব্র প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এই উপসর্গ রোধের জন্য নখের নিচে জমে ওঠা রক্ত ডাক্তার বের করে দেবেন ও স্পিরিট-ব্যান্ডেজ লাগাবেন। ব্যবস্থাটি সরল এবং এতে অবেদনক প্রয়োজন নেই। বাইরের কিছু (সহজলক্ষ্য ধাতুসূচ, রেতির টুকরা, ফালি বা কাঠের টুকরা) চামড়া ভেদ করলে সেগুলো সন্না দিয়ে তুলে ক্ষতে আয়োডিন টিংচার লাগিয়ে স্পিরিট-ব্যান্ডেজ বাঁধা উচিত। 

(চলবে...)

মূল: ভ. ভ. ইউদেনিচ

অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা