ফুসফুসে কি মশা ঢুকতে পারে

মানবদেহের ফুসফুসে কোনোভাবে কীটপতঙ্গ ঢুকলেও সেটা বেশিক্ষণ বাঁচবে নাছবি: সংগৃহীত

আনমনে বসে আছেন বা কারো সঙ্গে কথা বলছেন। ফুড়ুৎ করে পাজি এক মশা ঢুকে পড়ল নাকের ফুটোয়। মুহূর্তে সব শান্তি শেষ। নাক দিয়ে জোরে জোরে বাতাস ছেড়ে মশাটাকে বের করার দুরূহ চেষ্টা চালাচ্ছেন। মশার সঙ্গে একরকম যুদ্ধই বলা যায়। অবশেষে নচ্ছার পাজিটা বের হয়ে গেলে খুব শান্তি লাগে। এমন পরিস্থিতিতে হয়তো আপনিও পড়েছেন। শুধু মশা কেন? ছোট ছোট অনেক কীটপতঙ্গও পথ ভুলে ঢুকে পড়তে পারে নাক বা মুখের মধ্যে। মুখ থেকে চলে যেতে পারে সরাসরি গলায়। কাশি দিলে আবার বেরিয়ে আসে এসব দুষ্ট জীব। না বের হলে বড়জোর ঠাঁই হয় পাকস্থলীতে। কারণ, খাদ্যনালীর গন্তব্য সেখানেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নাকে বা মুখে ঢুকে পড়া পোকা কি শ্বাসনালী ধরে ফুসফুসে ঢুকে পড়তে পারে?

এ প্রশ্নের উত্তর এককথায় দেওয়া কঠিন। আমাদের শ্বাসনালীতে আছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রথমত, শ্বাসনালীর ভেতর থাকে শ্লেষ্মার প্রলেপ ও ছোট ছোট চুল। নাকের ভেতর পোকা ঢুকলে শুরুতেই এতে বাধা পায়। শুধু পোকা বলি কেন, বাতাসে থাকা ধুলোবালির কঠিন কণাও আটকে যায় এই বেড়াজালে। ফুসফুসে যায় শুধু বায়বীয় পদার্থ। দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হলো, শ্বাসনালীর অতি সংবেদী দেয়াল। অস্বাভাবিক কোনো কিছু ঢুকলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাশি শুরু হয়। ফলে শ্বাসনালীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার আগেই মশা বা কীটপতঙ্গ বেরিয়ে আসে কাশির দমকে।

যদিও এটা খুব একটা ভালো খবর নয়। কারণ মশা বা কীটপতঙ্গের ছোট্ট মৃতদেহটি ফুসফুসে অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে। সময় মতো চিকিৎসা না নিলে বিপন্ন হতে পারে জীবন।

তাই সাধারণত নাকের মধ্য দিয়ে ফুসফুসে পোকা ঢোকার কথা নয়। কিন্তু কোনো কারণে যদি শ্বাসনালীর প্রতিক্রিয়া কমে যায়, কিংবা আপনি অচেতন থাকেন, তবে শ্বাসনালী ধরে মশার মতো কীটপতঙ্গ ঢুকে পড়তে পারে ফুসফুসে। ব্রিটিশ প্রাণিবিজ্ঞানী লুইস ভিলাজনের মতে, মানবদেহের ফুসফুসে কোনোভাবে কীটপতঙ্গ ঢুকলেও সেটা বেশিক্ষণ বাঁচবে না। যদিও এটা খুব একটা ভালো খবর নয়। কারণ মশা বা কীটপতঙ্গের ছোট্ট মৃতদেহটি ফুসফুসে অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে। সময় মতো চিকিৎসা না নিলে বিপন্ন হতে পারে জীবন। তাই নাকে মশা বা অন্য কোনো কীটপতঙ্গ ঢুকলে, তা কাশি দিয়ে বা নাক ঝেড়ে বের করার চেষ্টা করতে হবে। কীটপতঙ্গ বের না হলে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে।

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা